বিশ্বনাথের সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়ঃ তদন্তের দাবী

Uncategorized
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বনাথ উপজেলা বর্তমান সমবায় কর্মকর্তার নাম কৃষ্ণা রাণী তালুকদার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি পাহাড় সমতুল্য অভিযোগ মাথায় নিয়ে বহাল তবিয়তে ঠিকে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর ক্ষমতার দাপটে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নাকি তাকে সমীহ করেন। একজন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত দূর্নীতির অভিযোগ হয়তো আর কোন দিন কেউ শুনেনি। কিন্তু রহস্যজনক কারনেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বিশ্বনাথ উপজেলার চাউলধনী হাওরে দুটি হত্যাকান্ডের পর এ সমবায় কর্মকর্তার আসল চেহারা সমাজে বেরিয়ে আসে। একটি অবৈধ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে বৈধতা দিয়ে চাউলধনী হাওরের লীজ প্রদানের পথ সুগম করে দেন কৃষ্ণা রাণী তালুকদার। আর এই অবৈধ লীজ গ্রহিতারা সাবলীজ দিয়ে প্রায় ৮/১০বছর ধরে এই এলাকার কৃষকদের উপর অত্যাচারের তান্ডব চালাচ্ছে। কৃষ্ণা রাণী তালুকদারের বিরুদ্ধে সু-নিদিষ্ট কিছু অভিযোগ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহা-পরিচালক ও নিবন্ধক সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, নেত্রকোনার কালিয়াজুরি উপজেলার নগর ই্উনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা কৃষ্ণা রাণী তালুকদার তাঁর সকল তথ্য গোপন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের শেখঘাট সরকারী কলোনীর স্থায়ী বাসিন্দা লিখে সিলেটের কোঠায় চাকুরীতে যোগদান করেন। তাঁর পিতা ও স্বামীর বাড়ী একই উপজেলায়। ২০০৪সালে সমবায় অধিদপ্তরে যোগদানের পূর্বে সিলেট শহরে তাঁর কোন ভু-সম্পত্তি ছিল না। বিশ্বনাথে যোগদানের পূর্বে তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তার অনিয়ম, ঘুষ দুর্নীতি ও দায়িত্ব কর্তব্য অবহেলার কারনে প্রয়াত সাংসদ মাহমদু উপ সামাদ চৌধুরীর নিদের্শে তাকে বিশ্বনাথে বদলি করা হয়। এখানে তিনি ৪/৫বছর ধরে অবস্থান করে কিছু লোকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে অফিসটিকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। সাবেক সাংসদ ইয়াহিয়া চৌধুরী অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন মহলে ডিও লেটার পেশ করেন। কিন্তু কৃষ্ণা রাণীর শরীরে কোন অভিযোগের ছোঁয়া লাগেনি।
সমবায় অধিপ্তরের প্রাক্তন নিবন্ধক আমিনুল ইসলাম কৃষ্ণা রাণীর দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে গুরুদন্ডে দন্ডিত করে দুই বছরের ইক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেয়ার আদেশ দেন।

চাউলধনী হাওরের লীজ গ্রহিতা “দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি” জলমহাল নিলামে একটি অযোগ্য সমিতি থাকলেও কৃষ্ণা রাণী তালুকদার সমিতিকে যোগ্য সমিতির প্রত্যয়নপত্র দিয়ে লীজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন এবং এই সমিতি চাউলধনী হাওরটি লীজ নিয়ে  লুট-পাট ও কৃষক ছরকুম আলী দয়াল এবং স্কুলছাত্র সুমেলকে হত্যা করা হয়। এ সমিতির অডিট রির্পোটে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলেও কৃষ্ণা রাণী তালুকদার সমবায় আইনের ১৮ (৮) ধারা লঙ্গন করে আব্দুল জলিলকে সভাপতি উল্লেখ করেন, আবার লীজ প্রদানে এক প্রকল্পের উপদেষ্টা নুরুল ইসলামের নামে লীজ দেয়া হয়। অভিযোগে এ দুটি হত্যাকান্ডের জন্য কৃষ্ণা রাণীকে দায়ী করা হয়। যুক্তরাজ্য প্রবাসী খুনি সাইফুলের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায় অবৈধ সমিতিকে তিনি বৈধ করে দেন। চাউলধনী হাওর লীজ গ্রহনের সময় উল্লেখিত সমিতির শেয়ার ছিল ৩৭হাজার ৪শ টাকা এবং সঞ্চয় ছিল মাত্র ৪৯হাজার টাকা। কিন্তু জলমহাল নিলামে ১৫ থেকে ২০লক্ষ টাকা বিনিয়োগের প্রমাণ দেখিয়েছেন কৃষ্ণা রাণী তালুকদার। এ ধরনের একটি অবৈধ সমিতিকে বৈধ করে দিয়ে কৃষ্ণা রাণী তালুকদার চরম দূর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, কৃষ্ণা রাণী তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলেও চালাক-চতুর এই কর্মকর্তা সবকিছু গায়েব করে দিতে পারেন।
দাখিলকৃত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাচাঁও আন্দোলনের আহবায়ক আবুল কালাম, যুগ্ম আহবায়ক আরিফ উল্লাহ সিতাব, আব্দুল আজিজ, নজির উদ্দিন, মাওলানা ছমির উদ্দিন, ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া প্রমুখ। অভিযোগের দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে আবুল কালাম বলেন, একমাত্র কৃষ্ণা রাণীর অতীলোভের কারনে চাউলধনী হাওর পারের ২৫হাজার কৃষকের চরম ক্ষতি ও দুটি হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটেছে। আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে কৃষ্ণা রাণী তালুকদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী করছি।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কৃষ্ণা রাণী তালুকদারের সাথে ০১৬৭৭০১৫৬২৮ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন, কথা বলা যাবে না বলে জানান।
সিলেট জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ সহকারী নিবন্ধক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা চন্দন দত্ত অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *