আব্দুস সালাম, মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই।নিজের অপুরন্ত চাহিদা মেটাতে নানা ঝুকি নিতে হয় মানুষেকে।ঝুকিতে কেউ সাফল্য অর্জন করে আর কেউ মাঝে মধ্যে ব্যর্থ হয়। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সোনার হরিণ ধরতে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিল।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার আশা পূরণ হয়নি। জালালদের খপ্পরে পড়ে স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গলে তার করুণ মৃত্যু হয়। আত্মীয় স্বজন-পাড়া প্রতিবেশি সহ বিশ্বনাথের সর্বত্র তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দাললদের মিষ্টি কথায় এমন ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়ে কেউ যেন বিদেশ পাড়ি না জমায়। একজন ফরিদের মৃত্যু একটি পরিবারের এলাকা তথা সমাজের সারা জীবনের কান্না।দালালের কুপরামর্শে এভাবে বেআইনি ও ঝুকি পূর্ণ বিদেশ যাত্রায় দেশ ও সরকারের বদনাম কম হয়নি। এ ধরনের অর্থ লোভী মানুষ খেকো দালালদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্ভাবনাময় এ তরুনের সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর বড় ছেলে। তার পাঁচ ভাই ও এক বোন-স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা সেলিনা বেগম ও তিন বছর বয়সী একমাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর দালাল ও ৫ সঙ্গীর সাথে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথিমধ্যে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে নিখোঁজ হন ফরিদ উদ্দিন। নিখোঁজের ১১ দিন পর লাশ স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গল (দুর্গম পাহাড়ি এলাকা) থেকে মরহেদ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ।
লন্ডনে থাকা এক আত্মীয় স্লোভাকিয়ার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ দেখে নিখোঁজ ফরিদের চাচা আলকাছ আলীকে জানান। তারপর ই-মেইলের মাধ্যমে সে দেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আলকাছ আলীর বন্ধু লন্ডনের সিআইডি পুলিশ মুন্নী আক্তার। পরে মুন্নি আক্তারকে নিয়ে গত (১২ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার রাতে স্লোভাকিয়ায় গিয়ে সে দেশের পুলিশের সহায়তায় ফরিদের লাশ শনাক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে প্রথমে রাশিয়া যান ফরিদ। খেলা শেষ হওয়ার মাসখানেক পর তিনি রাশিয়ায় অবস্থানরত লিটন বড়ূয়ার সঙ্গে ৭ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রথমে ইউক্রেন যান। চুক্তিমতে তার পরিবার লিটন বড়ূয়ার সহকর্মী সিলেটের বিয়ানীবাজারের কামাল আহমদের কাছে টাকা জমা রাখেন। ইউক্রেনে কয়েক মাস অবস্থান করার পর গত ২ সেপ্টেম্বর চুক্তি অনুযায়ী ওই দালালের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাত্রা করেন। কিন্তু তার অন্য পাঁচ সঙ্গী ও দালাল ফ্রান্সে গিয়ে পৌঁছলেও যাত্রাপথে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে নিখোঁজ হন ফরিদ। ফরিদের এমন করুণ মৃত্যুতে বিশ্বনাথের সর্বত্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।