বাংলাদেশে আরাফার রোজা কোনদিন?

আন্তর্জাতিক ইসলাম জাতীয় সারাদেশ
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :: বাংলাদেশে ১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ২০২৫ খৃস্টাব্দের আরাফার রোজা রাখতে হবে শুক্রবার ৯ই যিলহজ। এটাই হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা। এদিন ফজরের পর থেকে ১৩ তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত,( মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর একবার) তাকবির পড়তে হবে। এর পরের দিন হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমুন নাহর। যা নিজ অঞ্চলের ১০ জিলহজ।

সউদী আরবের ৯ তারিখ ইয়াওমে আরাফাা। যার পরদিন হবে ইয়ামুন নাহর বা কোরবানি জবেহ করার দিন। সউদী আরবের ৯ জিলহজ্জ বাংলাদেশে হবে ৮ জিলহজ। এদিন আরাফাতের ময়দানে হজ অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এদিন বাংলাদেশে ৯ তারিখের রোজা রাখলে, সেটা আরাফাতের দিনের রোজা বলে গণ্য হবে না।

অনেকে জিলহজ মাসের শুরু থেকে নয়টি নফল রোজা রাখার চেষ্টা করেন। তারা সব রোজার মতো ৮ ও ৯ তারিখও রাখতে পারেন। তবে ৯ তারিখের রোজাকে ইয়াওমে আরাফার রোজা মনে করতে হবে। ৮ তারিখকে মনে করা যাবেনা। শুধু একটি রোজা রাখলে ৯ তারিখ রাখতে হবে। যা হবে নয় দিনের শেষ দিন এবং ১০ তারিখ ইয়াওমুন নাহর বা কোরবানির ঈদের দিন।
যে দিনের রোজা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। —সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২

‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ: নবম যিলহজ। এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। কারণ, এই রোযা আরাফা বা উকূফে আরাফার আমল নয়; বরং তা ঐ তারিখের আমল। ‘ইয়াওমে আরাফা’ হলো ঐ তারিখের (নবম যিলহজের) পরিচিতিমূলক নাম। যেহেতু ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন হজের প্রধান ফরজ আমল উকূফে আরাফা। যা তারিখ হিসাবে নবম যিলহজে আদায় করা হয়, তাই পরিভাষায় এ তারিখেরই নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’।

এ কারণে যেসব আমল আরাফা বা উকূফে আরাফার সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং যিলহজের ৯ তারিখের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’র আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, নয় তারিখে বা দশ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ঈদের আগের দিন আমলটি করতে হবে। ঈদের দিনটির পরিচিতিমূলক নাম হচ্ছে ইয়াওমুন নাহর।

এ প্রয়োগের কারণে, মানে ৯ যিলহজকে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বলা, আরাফা ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে তো কোনো বিভ্রান্তি হয় না; কিন্তু দূরত্বের কারণে সে অঞ্চলের সাথে যেসব অঞ্চলের তারিখের পার্থক্য হয়, সেখানে –যারা এই প্রয়োগের সঠিক অর্থ সম্পর্কে অবগত নয়, তাদের– বিভ্রান্তি ঘটে। কিছু আলেমও সউদী সময় ও তারিখের অনুসরণে নিজ অঞ্চল ও দেশের মানুষকে হাদীসে বর্ণিত দিন বা তারিখের স্থলে সউদী আরবের অনুকরণে একদিন আগেই আমলটি করার কথা বলে থাকেন।

ইয়াওমে আরাফা অর্থ: নবম যিলহজ এ প্রয়োগের আরেকটি দৃষ্টান্ত ‘তাকবিরে তাশরীক’। এটি আরাফা বা উকূফে আরাফার বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় নবম যিলহজ ফজর থেকে; অথচ যে দলীল দিয়ে ৯ তারিখ থেকে তাকবিরে তাশরীক শুরু হওয়া প্রমাণিত, তাতেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ শব্দই আছে। দলিলটি এই— হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আরাফার দিন’ ফজরের পর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত তাকবীর (তাশরীক) বলতেন এবং (সেদিন) আসরের পরেও তাকবীর বলতেন। —মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৭৭, ৫৬৭৮।

এখানে কি ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ নবম যিলহজ না করে কোনো উপায় আছে? অবশ্যই নেই। কারণ এর পরের দিনগুলোতে নামাজের পর তাকবির বলতে হয়। বাংলাদেশে সউদী আরবের ৯ তারিখ যা বাংলাদেশে ৮ তারিখ আরাফাত দিবসের রোজা মনে করে রোজা রাখা এ কারণেও ভুল। কেননা এদিন থেকে এদেশে নামাজের পর ওয়াজিব তাকবির বলা শুরু করার কোনো উপায় নেই। পরদিন যেমন কোরবানি করার উপায় নেই। কেউ করলে তা ৯ জিলহজ তারিখে হবে এবং ঈদ ও কোরবানি ৯ তারিখে হতে পারে না। এবিষয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর।

কোনো অঞ্চলের কিছু লোক যদি সউদী ৯ তারিখকে নিজের দেশেও ৯ তারিখ ধরে আরাফা দিনের রোজা রাখেন, তাহলে একই যুক্তিতে তাদেরকে পরদিন ১০ তারিখ ধরে ঈদ ও কোরবানি করতে হবে, যা সুস্পষ্ট ভুল। যারা সউদী আরবের অনুকরণে আরাফা দিনের রোজা রাখবেন, তাদের তো পরদিন সউদী আরবের অনুকরণে ঈদ ও কোরবানি করতে হয়। আর যদি কেউ বোকামি করে আরাফা দিনের পর একটি দিন বাড়তি গোনে পরদিন ঈদ বা কোরবানি জবেহ করেন, সেটা হবে এক উদ্ভট, হাস্যকর এবং ইজমায়ে উম্মাহ বিরোধী কথা।

প্রযুক্তির ব্যবহারে আরাফাতে অবস্থান জানতে পেরে কোনো আলেম ও শায়েখ যদি এটিকে শরীয়তের পরিভাষার ইয়াওমে আরাফা বলতে চান, তাহলে একই প্রযুক্তির কারণে সোজা এরপরের দিনকে তার ইয়াওমুন নাহর বলতে হবে। যা স্বাভাবিক মাসআলা অনুযায়ী কেউই বলতে পারবেন না।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *