অনলাইন ডেস্ক :: সিলেটের ইসলামপুর এলাকার প্রাসাদসম আলিশান বাড়ি ‘কাজী ক্যাসল’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিলো বাড়িটি নির্মাণের পর থেকেই। ২০০৮সালে ব্যবসায়ী মাহতাবুর রহমান প্রায় ৩০০কোটি টাকা ব্যয়ে এই বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর থেকেই সবার আগ্রহ ছিলো এ বাড়ি নিয়ে।
এখন ভিন্ন এক কারণে ফের সিলেটের বিলাসবহুল এই বাড়ি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাউর হয়েছে, বিলাসবহুল বাড়িতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সুযোগ বুঝে এখান থেকেই সীমান্ত পার হয়ে আসামের গৌহাটি, পরে কলকাতা পৌঁছেন তিনি।
শুধু ওবায়দুল কাদের নন; ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। তাদের অনেকেই এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আল-হারামাইন হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী মাহতাবুর রহমান নাসিরের বাড়ি কাজী ক্যাসলে অবস্থান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে নাসিরের ছোট ভাই ওলিউর রহমান বলেছেন, ওবায়দুল কাদের বড়মাপের মানুষ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরেই আওয়ামী লীগে তাঁর অবস্থান। আমাদের বাড়িতে ওবায়দুল কাদেরের মতো কেউ আসেননি। এলে অনেক আগেই চাউর হয়ে যেত। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের সঙ্গে অনেকের সম্পর্ক আছে। তবে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক নেই। আমাদের পরিবারের সদস্যরা প্রবাসে। এ জন্য বিশাল বাড়িতে গত কয়েক মাস কেউ থাকছেন না। এ সুযোগে একটি মহল ফেসবুকে আমাদের বাড়িতে ওবায়দুল কাদের ছিলেন বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ওই দিন থেকেই হদিস নেই ওবায়দুল কাদেরের।
এ ব্যাপারে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। শুনেছি, ওবায়দুল কাদের সিলেট সীমান্ত দিয়ে প্রথমে গৌহাটি যান; সেখান থেকে কলকাতা।
বিএনপির স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী ফেসবুকে কাজী ক্যাসলে ওবায়দুল কাদের বহুদিন অবস্থান করেছেন- এমন দাবি করে পোস্ট দেন। এর পর থেকেই বাড়িটি ঘিরে মানুষের মধ্যে কৌতূহল বেড়েছে। সিলেটে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বাড়িটির গত দুই মাসের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
তবে ওবায়দুল কাদেরের কাজী ক্যাসেলে অবস্থান বা সিলেট সীমান্ত দিয়ে পালানোর ব্যাপারে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
শনিবার সরেজমিন বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। সিকিউরিটি ইনচার্জ মারজান জানান, তার পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়। কিছু জানার থাকলে আল-হারামাইনের ব্যবস্থাপক পারভেজ আহমেদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। ফোন দিলে তিনিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মেজরটিলার স্থানীয়রা জানান, কাজী ক্যাসলে গত তিন মাস লোকজনের আনাগোনা কমে গেছে। আগে নামিদামি গাড়িতে অনেকেই আসা-যাওয়া করতেন। সারাক্ষণ সাজ সাজ রব থাকত। তবে এ পরিবারের মানুষ অনেক প্রভাবশালী। তাদের হাতও লম্বা। ফলে সেখানকার খবর সত্যিকার অর্থে সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী মানুষের মধ্যে রয়েছে আত্মীয়তার বন্ধন। আবার চোরাকারবারে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী চক্র। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার পাশপাশি সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেকে পালিয়ে ভারতে গেছেন। তাদের অধিকাংশই গেছেন সিলেট সীমান্ত দিয়ে। পালাতে গিয় এ সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেটের পাহাড়, হাওর ও নদীবেষ্টিত সীমান্ত দিয়ে ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই দু’দেশের সীমান্তবর্তী মানুষ যাতায়াত করেন। ৫ আগস্টের পর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান প্রমুখ ভারতে গেছেন। ভারত হয়ে লন্ডনে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে শফিকুর রহমান ও সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর।
অবৈধভাবে সিলেট সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে গত ২৪ আগস্ট প্রাণ হারান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। আর কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের জঙ্গল থেকে গ্রেপ্তার হন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আর জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল আহমদ।