স্টাফ রিপোটার : বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারি ইউনিয়নের পিটাকরা গ্রামের একটি নিরীহ পরিবারে উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় জুলুম অত্যাচার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এই পরিবারের পুরুষরা পালিয়ে জীবন যাপন করলেও মহিলারা বন্দি অবস্থায় আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু তাই নয় প্রতিপক্ষের লোকজন তাদেরকে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদের নানা ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি থানা পুলিশ জেনেও না জানার ভান করছে। জামাত বিএনপির এই চক্রটি একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীকে অশ্লিল ভাষায় কটুক্তি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমন অভিযোগ করে পিটা করা গ্রামের আলকাছ আলীর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ইমরানা বেগম এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১১টায় বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে লিখিত এক বক্তব্যে ইমরানা বলেন, পিটাকরা গ্রামের আব্দুল আলী নামের শিবিরের ক্যাডার তার ফেসবুক আইডিতে “ বিশ্ব কাফের হাসিনার পতন চাই, সারা বছর ভন্ডামি করে কিন্তু নির্বাচন এলে হিজাব পরে, আল্লামা সাইদিকে, নরপশু হাসিনার বিশ্ব কাফের ভারতের দালালি শেক হাসিনার জেল থেকে মুক্তি দিন,। একই গ্রামের মাহমদ আলী নামের জামাত নেতা তার ফেইসবুক আইডিতে, ‘শেখ হাসিনা আসলেই কোন ধর্মে বিশ্বাসি, উনার গণভবনে মুর্তি কেন জাতি জানতে চায় ইত্যাদিসহ অনেক কটুক্তি করে। লিখিত বক্তব্যে ইমরানা আরো উল্লেখ করেন, তার চাচা মাওললানা ইলিয়াস হুমাইদির ছবি আপলোড করে আব্দুল আলী নামের এক শিবির ক্যাডার। তার ফেসবুক আইডিতে বলে, ‘এই হালারে চিনে রাখ নাস্তিকলীগ ও কোত্তালীগ হালা জানোয়ার, ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করে। এই ধরনের মানহানীকর কটুক্তি একই গ্রামের উগ্র আরেক শিবির ক্যাডার ইমরান আহমদ রানা তার ফেইসবুক আইডিতে ইলিয়াস হুমাইদির ছবি আপলোড করে ব্যক্তিগত পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুভুতিতে চরম আঘাত করে। এমরানা এসব সন্ত্রাসীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। ইমরানা এসব ব্যক্তির ফেসবুক আইডির স্কীনসট প্রিন্ট করে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের দেখান। প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের কটুক্তি করা সঠিক নয় মর্মে, ইমরানার চাচা ইলিয়াস হুমাইদি তার মোবাইলে আপত্তি¡ করলে এই চক্রটি তাকে হত্যার হুকমি দেয়। কয়েক দফা হামলা করে পরিবারের নারী পুরুষদের জখম করা হয়। ‘ফলে গরিব এই পরিবারটি এখন দারুন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে।
ইমরানার অভিযোগ, তাদের প্রতিপক্ষ গ্রামের আখতার হোসেন, ময়নুল ইসলাম, ইসলাম উদ্দিন, মাহমদ আলী, আব্দুল অদুদ আজাদ, ময়না মিয়াসহ জামাত বিএনপির সন্ত্রাসী চক্রই দায়ি। ইমরানা ভুমির কিছু পর্সাসহ বেশ কিছু কাগজ পত্রাদি সাংবাদি কদের দেখিয়ে বলেন, তার পূর্ব পূরুষের জায়গা জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছে এই অপরাধী চক্র। পিটাকরা মৌজার এসএ খতিয়ান-২০, দাগ নং-১০১৭, ১০১৮, ১০১৯ একই মৌজার ৪৮নং খতিয়ানে ৭০৯, ৭১৬, ৭১৮দাগ তাদের পূর্ব পুরুষ শাহ সিকান্দার (র.) নামে রেকর্ডভুক্ত থাকাবস্থায় আখতার হোসেন গংরা বড় অংকের টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পিটাকরা মৌজার ১নং খতিয়ানের ৯৯৮ দাগটি জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডভুক্ত থাকলেও অধিকাংশ ভূমি প্রতিপক্ষের আখতার হোসেন দখল করে রাখে। তারপর রাস্তার জন্য আলকাছ আলীর (ইমরানার পিতা) বাড়ির অংশ দিয়ে রাস্তার জোর পুর্বক দখলের চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, এই পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে হওরানীর অভিযোগ করেছেন এমরানা। তার অভিযোগ থানা পুলিশ বড় অংকের টাকা নিয়ে জামাত বিএনপির ক্যাডারদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ায় সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ইমরানার চাচা ইলিয়াস হুমাইদি থানায় জিডি করতে গেলে ওসি শামিম মুসা আখতার হোসেনের পক্ষ নিয়ে তাকে থানা থেকে বের করে দেন। বিষয়টি তিনি ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে ৯৯৯ নম্বরে অভিযোগ দিলে ১৬২৮/২০১৯ নং জিডিটি থানা পুলিশ এন্টি করে। ইমরানার পিতা আলকাছ আলী ও চাচা হুমাইদির বিরাদ্ধে আখতার হোসেন বাদি হয়ে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করলে ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলাটি ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়। এতে প্রতিপক্ষ আখতার হোসেন ও তার লাটিয়াল বাহিনী উত্তেজিত হয়ে গত ২৬ মার্চ ইলিয়াস হুমাইদি ও আলকাছ আলীকে হত্যার জন্য আক্রমন করে। এতে পরিবারের নারী পুরুষ জখমপ্রাপ্ত হন। গুরুত্বর জখমি ইলিয়াস হুমাইদির মাথায় জখমের ১৩টি সেলাই ও হাতে জখমের ৫টি সেলাই থাকাসত্বেয় দতন্তকারি কর্মকর্তা এসআই নুর হোসেন তদবির করে মেডিকেল থেকে হালকা রিপোর্ট নিয়ে আসেন এবং ৬জন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে ৪জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। আদালতে বাদি আলকাছ আলী নারাজি দাখিল করলে আদালত এ মামলাটি পিভিআইকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি এসআই নবারুন গুপ্ত চৌধুরী তদন্ত করছেন।
ইমরানা আরো অভিযোগ করে বলেন, আখতার হোসেন, আব্দুস সালাম, ইসলাম উদ্দিনসহ ক্ষতিপয় ব্যক্তি তাদের বাড়ির সামনে এসে অশালিন ভাষায় গালি গালাজ ও নানা ধরনের খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে আমাদেরকে মানুষিকভাবে অপমান ও বিপর্যস্থ করে তুলেছে। তারা এতো প্রভাবশালি যে আমার বাপ চাচাকে হত্যার জন্য বিদেশ থেকে কয়েক লাখ টাকা এনে জমা রেখেছে। এমতাবস্থায় আমরা দিবানিশি জান মাল ও ইজ্জত বাচাঁনোর উপায় খুঁজছি। দয়া করে সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের দিকে নজর রাখবেন এবং আমাদের পরিবারের কোন ক্ষতি হলে উপরোক্ত সন্ত্রাসীরাই দায়ি থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে ৮০ বছর বয়সি সামছুন নাহার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে আসার সুযোগে আমার ছেলে হুমাইদিকে দেখতে পেলাম। প্রায় ১বছর ধরে সে প্রাণ ভয়ে বাড়িতে আসতে পারেনা এবং আমি দেখতে পাইনা। আমার দুটি ছেলেকে যে কোন সময় সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে পারে। অনুরোপভাবে ইমরানার মাতা বেগম বিবি বলেন, আমার ৪টি মেয়ে নিয়ে খুবই অসহায় ও বিপদগ্রস্থ অবস্থায় আছি। যে কোন সময় প্রতিপক্ষ বড় ধরনের দূঘটনা ঘটাতে পারে। তাই তিনি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার নিকট ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তা দাবি করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমরানা জানায়, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে অশালিন ভাষায় কটুক্তি করার পরও থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। সেখানে আমাদের মত নিরীহ পরিবারের কি অবস্থা হতে পারে তা আপনারা অনুমান করতে পারেন। ইমরানা তাদের পরিবারের যে কোন ক্ষয় ক্ষতির জন্য জামাত বিএনপির এই উগ্র সন্ত্রাসীরা দায়ি থাকবে বলে উল্লেখ করেন।