অনলাইন ডেস্ক :: লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা অচিরেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে বলে প্রচার করেছেন বেশকিছু জাতীয় গণমাধ্যম। তবে বিষয়টি নিয়ে একটি ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রয়টার্সে সাক্ষাৎকার দেওয়া শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়করাও বলছেন এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেননি তারা।
আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রয়টার্সের বরাত দিয়ে “নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে শিক্ষার্থীরা” শিরোনামে বেশ কিছু গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করতে দেখা যায় অনেককে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। তারা বলছেন এখনই কোনো নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি। আমরা এখন রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নজর দিচ্ছি।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নিজের ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, রাজনৈতিক দলগঠন আমাদের গণঅভ্যুত্থানের অভিমুখ না। এই মূহুর্তে প্রয়োজন অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, নতুন করে দেশগঠন-সংস্কার ও অভ্যুত্থানের স্পিরিট ও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। ছাত্র-জনতা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করবে।
নাহদি লেখেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের এক দফার অংশ ছিলো। সেজন্য বিস্তর কাজ ও রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রয়োজন। জনগণের সাথে আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রুপরেখা প্রণয়ন করতে চাই। এই মূহুর্তে রাজনৈতিক দলগঠনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নাই। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষায় সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে এবং সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে সাক্ষাৎকার দেওয়া ৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন নতুন সরকারকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার উদ্দেশ্যে সৃজিত লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আব্দুল্লাহ। মূলত তার একটি বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে মাহফুজ তার ফেসবুকে লেখেন, রাজনৈতিক দল খোলার কথা বলা হয়নি! রয়টার্সে দেয়া আমার বক্তব্য ভুলভাবে এসেছে। আর সে ভুল বক্তব্যের বাজে বা উদ্দেশ্যমূলক অনুবাদ বাংলাদেশি মিডিয়া প্রচার করেছেন।
মাহফুজ লেখেন, রয়টার্সে আমার বক্তব্য ছিল, আমরা রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে এখনই ভাবছি না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নূতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আমরা কাজ করছি। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখা এবং সরকারকে সংহত করা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা অংশীজনের সাথে কথা বলে আমরা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে ও কাজ করব।
তিনি আরো লেখেন, এ কাজে অন্তত এক মাস লাগবে। আর, রয়টার্স ও লিখেছে এক মাস পর নির্ধারিত হবে আমরা দল করব কি করবনা! তবে, রয়টার্স একটি ভুল করেছে, নাগরিকদের বদলে তারা ভোটার শব্দটি ব্যবহার করেছে। অথচ, নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে আমাদের খুব কমই কথা হয়েছে। কৃষ্ণ কৌশিককে আমি লিখেছি, উনি হয়ত এটা এডিট করে দিবেন।
রয়টার্সের সাংবাদিক বারবার জিজ্ঞাসা করসিলেন, দ্বিদলীয়কাঠামো নিয়ে এবং তা উতরে যেতে রাজনৈতিক দল করব কিনা। আমি বলেছি, আমরা দল বা ব্যক্তি নয়, ব্যবস্থার সংস্কার চাচ্ছি। যাতে যে দলই আসুক তাকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হয়। কিন্তু, এমনভাবে বলা হল যেন আমি মাইনাস টু চাচ্ছি। যেটা আমার উদ্দেশ্য না অবশ্যই।
আমাদের এখনকার লক্ষ্য, রাজনৈতিক লড়াইকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে গঠনমূলক কাজের দিকে চালিত করা। উপযুক্ত সময়ে রাজনৈতিক গঠন/গড়ন কেমন হবে, তা সবাই জানতে পারবেন।
মাহফুজ আব্দুল্লাহর দেওয়া এই ফেসবুক স্ট্যাটাস নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে শেয়ার করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। মাহফুজ আব্দুল্লাহ ছিলেন মূলত এই আন্দোলনের পর্দার পেছনের কারিগর। তিনি সার্বক্ষণিক সমন্বয়কদের পরামর্শ দিয়ে পাশে ছিলেন বলে জানা যায়। সুত্র-দৈনিক ইনকিলাব