ঢাবির নতুন ভিসির আলোচনায় ৬ নাম, মঙ্গলবার হতে পারে প্রজ্ঞাপন

শিক্ষা সারাদেশ
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :: কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী ছাত্র জনতার ব্যাপক আন্দোলনের ফলে অবসান হয়েছে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী সরকারের। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ এখন জনবিচ্ছিন্ন। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনরোষের মুখে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। আওয়ামী লীগের এমন অবিশ্বাস্য পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন দফতরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া শীর্ষ পদে চলছে ব্যাপক রদবদল। কেউ স্বেচ্ছায় কেউ বা আবার বাধ্য হয়েই করছেন পদত্যাগ।

পদত্যাগের এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত শনিবার (১০ আগস্ট) পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ফলে শূন্য পদে কে আসবেন তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ নানামহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, এমন কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পাক যিনি দলমত নির্বিশেষে সকল শিক্ষক- শিক্ষার্থীকে একই চোখে দেখবেন। সাম্য ও মানবিক মর্যাদা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজাবেন। যিনি হবেন ভিশনারি কিন্তু নির্লোভ ; হবেন শিক্ষার্থী বান্ধব। এক্ষেত্রে নির্দলীয় নিরপেক্ষ শিক্ষকই ভিসি হিসেবে সবচেয়ে ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষার্থীরা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একটি সূত্র বলছে মঙ্গলবারের (১৩ আগস্ট) মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম ভিসির নাম ঘোষণা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে কে হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী ভিসি সে নিয়ে নির্দিষ্ট কারো নাম জানা যায়নি। তবে আলোচনায় রয়েছেন নিরপেক্ষ একজন শিক্ষকসহ বিএনপিপন্থী ও বামপন্থী দুই শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষকের নাম।

আলোচনায় থাকা শিক্ষকরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. কামরুল হাসান মামুন।

এই পাঁচ প্রফেসরের মধ্যে নিরপেক্ষতার বিচারে এগিয়ে রয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর৷ প্রো-ভিসি ও ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস সোয়ানসি, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করা প্রফেসর খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে একাডেমিক ও কার্যকরী ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের উন্নয়নে অবদান রাখছেন।

জানা যায়, প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। প্রজ্ঞা ও পেশাদারিত্বের দিক থেকেও তিনি অনন্য। যার কারণে, তিনি ভিসি হিসেবে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

দেশের শাসনক্ষমতা এখন অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে হলেও আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের ভূমিকা দৃশ্যমান। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ কিংবা আলোচনার মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী লোকদের বসানোর চেষ্টা করছে তারা। সে হিসেবে দলীয় বিবেচনায় ঢাবির পরবর্তী ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রফেসর ওবায়দুল ইসলাম ছাড়াও এ তালিকায় বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সাদা দলের বর্তমান আহ্বায়ক প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান। প্রফেসর ছিদ্দিকুর রহমান খান বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট। তিনি সহকারী প্রক্টর ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে দীর্ঘ ৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের দুই দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। এর বাইরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় সময়ই বিভিন্ন টকশোতে কথা বলতে দেখা যায়। অন্যদিকে প্রফেসর লুৎফর রহমান বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা হলেও সব দলীয় শিক্ষকদের মাঝেই রয়েছে তার দারুণ জনপ্রিয়তা। জনপ্রিয়তার কারণে গত কয়েকবছরে ঢাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তাকে নেতা বড় পদে দেখা যায়। মূলত বিএনপিপন্থী হলেও এই তিন শিক্ষককে দলকানা বলার সুযোগ নেই। তারা সকলেই সৎ এবং নিষ্ঠাবান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক মহলে পরিচিত।

বামপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে পরবর্তী ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে আলোচনায় রয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. কামরুল হাসান মামুন। তাদের নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন সময়ে উভয়ের ব্যাপারেই একাডেমিক দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রশংসা শোনা যায়। প্রফেসর তানজীম ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত। শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার প্রশ্নে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা যায় এই শিক্ষককে। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় ঢাল হয়ে ছিলেন তিনি। অন্যদিকে প্রফেসর কামরুল হাসান মামুন একজন দক্ষ অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান অসঙ্গতি নিয়ে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তূলনামূলক চিত্র তুলে ধরে সমালোচনা করে শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন প্রফেসর মামুন।

তবে বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী হওয়ায় এই দুই প্রফেসরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ইসলামের রীতিনীতির ব্যাপারে বিদ্বেষী মনোভাব পোষণের অভিযোগ রয়েছে। পারিবারিকভাবে মুসলিম হলেও ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গায় তারা ইসলামের বেশ দূরে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে ডানপন্থি ধর্মপ্রাণ ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের ভিসি হওয়াকে ইতিবাচকভাবে নেবে না বলে মনে করেন অনেকেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে এই দুই প্রফেসর জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও ধারণা করেন অনেকে।

কেমন ভিসি প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা আকিল বলেন, ভিসির অবশ্যই ছাত্রদের সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। ছাত্রবিচ্ছিন্ন প্রশাসক আমরা চাই না। ভিসি কোন নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর সেবা করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রদত্ত বাজেট লুট না করে প্রতিটি পয়সা সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক ব্যয় করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কার্যক্রম প্রশাসন আধুনিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করবে।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাওছার হোসাইন বলেন, এমন একজন ভিসি পাওয়ার আশা ব্যক্ত করি যিনি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে লেখাপড়ার মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল সুবিধাদি প্রদান, পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ তৈরি ও ইজমমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারেন।

সুত্র-দৈনিক ইনকিলাব


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *