গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রপ ফিল্ড মোজাইক হিসেবে স্বীকৃতি পেল শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিষয়টি জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকালে এই স্বীকৃতির কথা জানায় গিনেস কর্তৃপক্ষ।
করোনা অতিমারির কারণে যখন সারা দেশ স্থবির, তখন শুধু সচল ছিল কৃষি। ফলে দেখা মেলেনি খাদ্য ঘাটতিও। এমন সময়ে বাংলাদেশে তৈরি করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রপ ফিল্ড মোজাইক। যার নাম দেওয়া হয়েছে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু। এই মোজাইকের আয়তন এক লাখ ১৯ হাজার ৪৩০ বর্গমিটার।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী বালেন্দা গ্রামের ফসলি মাঠে শত বিঘা জমির গাঢ় বেগুনি ও সবুজ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। গত সপ্তাহে এটি দেখে অভিভূত হন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা।
গত ৯ মার্চ মঙ্গলবার শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখতে বগুড়ায় সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন সংস্থাটির দুই সদস্য। তারা হলেন- শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং বেসরকারি কোম্পানি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর’ এ প্রতিকৃতি তৈরির কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, প্রতিকৃতি তৈরিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সব শর্তই পূরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুই জাতের ধানের চারায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন জানান, ২০১৯ সালে চীনে তৈরি শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল আট লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। আর শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির আয়তন ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। এর দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ ৩০০ মিটার; যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। এছাড়া শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরির জন্য দুই ধরনের ধানের চারা লাগানো হয়েছে; যার মাধ্যমে জাতির পিতার সুস্পষ্ট অবয়ব ফুটে উঠেছে।
মাঠে দুই ধরনের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে আঁকা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি; যা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করেছেন। খালি চোখে শস্যচিত্রটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখা সম্ভব না হলেও একশ বিঘা জমিতে রোপণকৃত ধানের দৃশ্যে ড্রোনে ধরা পড়েছে জাতির পিতার শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি।
গত ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ও উচ্চ ফলনশীল দুই ধরনের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এতে সভাপতিত্ব করেন।
কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন কৃষক শ্রমিকের নেতা। এই শস্যচিত্রের মাধ্যমে তাকে জানতে পারবে সারা বিশ্ব। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি সারা বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত জনগণের নেতা। তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর এই চিত্রকর্মটি দেশের ১৭ কেটি মানুষকে জাগ্রত করে তুলবে।
জানা গেছে, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করার জন্য গাঢ় বেগুনি ও সোনালি রংয়ের ধান বেছে নেওয়া হয়। চীন থেকে এই ধানের জাত আমদানি করা হয়েছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক শস্যচিত্রের পরিচর্যা করছেন। এর আগে ১৫০ জন শ্রমিক এই চারা রোপণ করেন।