অনলাইন ডেস্ক :: গুম, হত্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আটক রেখে নির্যাতন পরিচালিত হতো বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সর্বোচ্চমহলের সরাসরি ইন্ধনে। আয়নাঘর যে শুধু সেনানীবাসের ভেতরে ছিলো বিষয়টা এমন নয়। এর বাইরে গুলশান ২ নম্বরেও সেফ হাউজ ছিলো যেগুলোকে আয়নাঘর বলা হতো। এর মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন অব. জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
অন্যদিকে গ্রেফতারের পর ডিবির রিমান্ডে একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান। তিনি বলেছেন, আওয়ামী দুঃশাসনের গত ১৫ বছরে হত্যা-গুম আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের বিশেষ একটি অংশে নেতৃত্বে দিয়েছেন সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা। তাদের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন অব. জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকী। তার হওয়ার কথা ছিল ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভাপতি। তবে তিনি তা না হয়ে সকল উন্নয়নমূলক কাজের পার্সেন্টেজ নিতেন। এই কাজগুলো কায়দা করে নিয়ে সেনাবাহিনীকে দিয়ে করাতেন। নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের ঘটনাতেও তারেক আহমেদ সিদ্দিকীর হাত ছিল বলে দাবি করেন হাসান সারওয়ার্দী।
অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এক সাক্ষাতকারে বলেন, এক সময় পছন্দের তালিকায় থাকলেও পরে শেখ হাসিনার চোখের বিষ হয়ে যান তিনি। ঘৃণ্য পরিকল্পনা থেকেই সেনাবাহিনীকে ব্যবসায় জড়িয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিন কারাগার থেকে মুক্ত হন হাসান। মূলত ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। বিএনপি কার্যালয়ে হাজির হন মিয়া আরেফি নামে এক ব্যক্তি। যার পরিচয় ছিলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা। এরপর পল্টন থানার এক মামলায় কথিত ওই উপদেষ্টাকে গ্রেফতারের পর ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে। এ সময় ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী ওই সময়ে মিয়া আরেফিকে সব শিখিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার ইন্ধনেই সব হয়েছে।
নানা কারণে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আক্রোশের শিকার হন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি শেষ করার আগে আমি শেখ হাসিনার সাথে দেখা করি তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম এত সুন্দর সেনাবাহিনীর দুরবস্থা কেন হচ্ছে। তিনি খুবই সংক্ষেপে উত্তর দিয়েছেন যা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউল আহসান বলেন, এক সময় ডিজিএফআইকে ব্যবহার করে তারা নিজস্ব ব্যক্তিস্বার্থ, নিজস্ব রাজনৈতিক অবিলাস চরিতার্থ করেছেন। সেনাবাহিনীকে মানুষের কাছে হেয় করার জন্য হীন প্রচেষ্টা ছিল ওই সরকারের। বড় বড় ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হতো। কেউ তা করতে না চাইলে তাকে (ওই ব্যবসায়ী) আয়না ঘরে আটক রাখা হতো। এমনকি ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যদের ধরে এনে এক সাথে চাপ প্রয়োগ করা হতো বলে গোয়েন্দাদের কাছে শিকার করেছেন সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা। তিনি শেখ হাসিনার অবৈধ আদেশ পালনকারী বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ছিলেন একজন সাইলেন্ট কিলার। অসংখ্য গুম-খুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্কিত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাম। একে একে বেরিয়ে আসছে তার অন্ধকার জীবনের নানা ঘটনা। জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউল আহসান জানান, বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল এনটিএমসি। শেষের দিকে সেনাবাহিনীর প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন শেখ হাসিনা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ খুব ভালো কাজ করছে। আর্মিরা পারছে না কেন?
রিমান্ডপ্রাপ্তদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের প্রথম দুই-একদিন আমরা তেমন কিছু জিজ্ঞেস করি না। জিজ্ঞাসাবাদ করা না হলে তারা বেশি ভয় পায়। মনে করে ফের রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে। তাদের যখন জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তারা আমাদের দেখে না। আমরাও তাদের দেখি না। জিয়াউল আহসানের মোবাইল ফোনে অনেক অপকর্মের তথ্য আছে জানিয়ে গোয়েন্দারা বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারের সময় তার মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারিনি। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সুত্র-দৈনিক ইনকিলাব