অর্থনীতি বাঁচাতে লকডাউনের বদলে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে করোনা মহামারি মোকাবেলা করতে চেষ্টা করছেন ইউরোপীয় নেতারা। তবে শুধু বিধি-নিষেধ দিয়ে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় দফা সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসে নতুন করে লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। ইউরোপের বাকি দেশগুলির অবস্থাও ভাল নয়। জার্মানির একটি জেলাও লকডাউনের কোপে পড়ছে।
শীতের মাসগুলিতে করোনা সংক্রমণ বাড়বে, এমন পূর্বাভাষ সত্ত্বেও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অর্থনীতি বাঁচিয়ে সংক্রমণ মোকাবেলা করার বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক দেশে লকডাউন ঘোষণা করতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের ব্যর্থতাকেই এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছে। সংস্থার জরুরি অবস্থার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইকেল রায়ান বলেন, মূলত কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম ঠিকমতো কার্যকর করা হচ্ছে না বলেই উত্তর গোলার্ধে সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে।
সোমবার আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলস করোনা ভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আবার লকডাউন ঘোষণা করেছে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বুধবার রাত থেকে ‘স্টে অ্যাট হোম’ নির্দেশ কার্যকর করছেন। সরকারি এই বিধিনিয়মের আওতায় অতি প্রয়োজনীয় ব্যবসাবাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্র বন্ধ থাকবে। তবে স্কুল খোলা রাখা হবে। ব্রিটেনের ওয়েলস প্রদেশে দুই সপ্তাহের জন্য ‘ফায়ারব্রেক’ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। ফলে অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারবেন না। ঘরে-বাইরে মানুষের মেলেমেশাও সীমিত রাখতে হবে।
জার্মানিরবাভেরিয়া রাজ্যের একটি জেলায় লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। ফলে ব্যারশ্টেসগার্ডেনার লান্ড এলাকার মানুষ মঙ্গলবার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ২৭২ জনেরও বেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এমন চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। স্কুল, রেস্তোরাঁ, বার, সিনেমা-থিয়েটার, জিম, হোটেল ইত্যাদি বন্ধ রাখা হচ্ছে। জার্মানির অন্য কিছু প্রান্তেও সংক্রমণের হার বাড়ছে। ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে দেশজুড়ে এখনো খুব বেশি কড়া পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে আদালতের হস্তক্ষেপের কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হচ্ছে।
ইউরোপের অন্য অনেক দেশও করোনা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বেলজিয়াম সোমবার থেকে এক মাসের জন্য বার ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে সে দেশের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ইটালিও একই পদক্ষেপ নিয়ে মানুষকে যতটা সম্ভব ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। পোল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক অংশ ‘রেড জোন’ হয়ে ওঠায় রাজধানী ওয়ারশ-র জাতীয় স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে প্যারিসসহ ফ্রান্সের নয়টি শহরে সারারাত কারফিউ জারি করা হচ্ছে। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।