এএইচএম ফিরোজ আলী: পহেলা সেপ্টেম্বর বুধবার ঘড়ির কাটা তখন সকাল ১১টা। তাজপুর থেকে শেরপুর পর্যন্ত যানজট। রাস্তায় মটরসাইকেলসহ রং-বে রংঙ্গের গাড়ী দাড়াঁনো। রিমঝিম বৃষ্টি পড়ছে। ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক থেকে বুরুঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম তিলাপাড়া গ্রামের দিকে সকলের যাত্রা। এ প্রতিবেদকেরও সকলের মত সে পথের সহযাত্রী। বেলা ১২টার মধ্যেই যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামানের বাড়ী লোকে লোকারণ্য। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে পুরো এলাকা সরম-গরম। বিভিন্ন বাড়ী থেকে নারী, পুরুষ মিলে উকি দিয়ে দেখছেন মানুষের আগমন। ‘জয়বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে পল্লী এলাকার নিস্তব্দ গ্রামটি আনন্দ উল্লাসে উজ্জবিত। এ যেন অপরূপ এক দৃশ্য। মেঘ-বৃষ্টিতে ভিজে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রচন্ড বেগে মধুর সুরে শ্লোগান দিচ্ছেন। সেলফি তুলতেও হুড়াহুড়ির কমতি ছিল না। সাধারনতঃ আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থাকলে আন্দোলন সংগ্রামে এ ধরনের শ্লোগান দেখা যেত। শ্লোগান শুনে আওয়ামীলীগের অনেক প্রবীণ নেতারাও উৎফুল্ল। দুপুর দু’টার পর বাড়ীতে তীল ধারনের ঠাঁই নেই। সকাল ১১টা থেকেই মধ্যাহ্নভোজ শুরু হয়। ওসমানীনগরের নেতারা কারো সাথে এক মিনিট কথা বলার যেন সময় নেই। কেউ অতিথি অভ্যর্থনা, কেউ কেউ আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত। সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন অনবরত ছুটাছুটি করছেন। এ যেন আওয়ামীলীগের এক মহামিলন মেলা। মহাসড়ক থেকে তিলাপাড়া গ্রাম পর্যন্ত ব্যানার ফেষ্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।
এই মিলনমেলার মূল আকর্ষণ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তাঁর সাথে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল, সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, তারুণ্যের আকর্ষণ ছিল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য, সহ সভাপতি তানজিদুল ইসলাম শিমুল, তিলত্তমা শিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার রাজ, বেনজিন হোসেন নিশি, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাদল, বেসকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপ অর্থ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম।
দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষনেতাদের উপস্থিতিতে জেলা, উপজেলা ও সিলেট বিভাগসহ সারা দেশ থেকে অনেক নেতাকর্মীর পদচারণায় আওয়ামীলীগের সিলেট রাজনীতির নিরবতার ছায়া ভেঙ্গে যেন একধাপ এগিয়ে গেল। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আনোয়ারুজ্জামানের বাড়ীতে প্রবেশ করেন। এ যেন রাজনীতির এক মহানন্দ ছিল। পানি, কাঁদায় ভিজেও কারও যেন বিরক্তি নেই। সকলেরই মূল লক্ষ্য সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমানের সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করা। এ সংবাদে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যোগদান করেন।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সুজাত আলী রফিক, মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন, অধ্যক্ষ জাকির হোসেন, আজাদুর রহমান আজাদ, বিধান কুমার সাহা, রঞ্জিত সরকার, শামীম আহমদ ভিপি, শামীম আহমদ, আলম খান মুক্তি, মুসফিক জায়গীরদার প্রমুখ।
বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের মধ্যে সহ সভাপতি ফখরুল ইসলাম মতছিন, জুবেদুর রহমান, সাধারন সম্পাদক ফারুক আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা জালাল উদ্দিন জালাল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সিতার মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পার্থ সারতি দাশ পাপ্পু সহ যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
আনোয়ারুজ্জামানের নিকটাত্মীয়রা জানান, যুক্তরাজ্য থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কয়েকদিন পূর্বে তিনি বাড়ীতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার নিদের্শ প্রদান করেন। গত কয়েকদিন যাবত তিনি দিবা-নিশি যোগাযোগ করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বাড়ীর ভেতরের মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সিলেট-৩ আসনের সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভায় যোগাদানের জন্য স্বল্প সময় থাকায় নেতারা সেখানে চলে যান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন প্রাপ্তির সবুজ সংকেত- এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানান দেয়া হয়েছে কিনা এমন কথা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, আনোয়ারুজ্জামান একজন ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। দেশের প্রতি ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর মমতা ও ভালবাসা নিদের্শন স্বরূপ দেশ বিদেশে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠের নেতাকর্মীরা আনোয়ারুজ্জামানকে সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর নিকট অনুরোধ জানাবেন। আমাদের প্রত্যাশা সিলেট-২ আসন পুর্ণরূদ্ধারে আনোয়ারুজ্জামানের কোন বিকল্প নেই। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা ও সিদ্ধান্ত মেনে চলবো। তৃণমূলে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আওয়ামীলীগের গতি বাড়িয়ে দেবে বলে অনেকেই মনে করছেন।