সিলেটে আওয়ামী লীগের কথা উঠলেই ভেসে ওঠতো একটি মুখ। মাথায় সাদা টুপি, মুখে কালো গোঁফ আর চোখে চশমা পড়া সদা হাস্যোজ্জ্বোল এই লোকটির নাম বদরউদ্দিন আহমদ কামরান অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
কেবল আওয়ামী লীগ নয়, সিলেটের রাজনীতিরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কামরান। আওয়ামী লীগের সীমানা পেরিয়ে পুরো নগরবাসীরই আস্থার প্রতিক হয়ে ওঠেছিলেন কামরান। একাধিকবার সিলেট সিটি করোপরেশনের মেয়র ও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কামরানের অনুসারীরা শ্লোগান দিতেন- ‘নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন কামরান।
নগরবাসীর সেই প্রিয় নাম হারিয়ে গেছেন চিরতরে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভোরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কামরান। এরপর থেকেই রাজনীতিতে তার উত্থান পর্ব শুরু।
১৯৬৯ এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝখানে প্রবাসে থাকায় একবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান।
২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় দুই বার কারাবরণ করতে হয় এই নেতাকে। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ দুটি সিটি নিবর্চাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চোধুরীর কাছে হেরে যান তিনি।
১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কামরান। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান। দীর্ঘ তিন দশক সিলেটের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ হারান কামরান। প্রায় তিন দশক কামরানবিহীন পথচলা শুরু হয় সিলেট আওয়ামী লীগের। তবে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মিলনে নির্বাহী সদস্য করা হয় কামরানকে।
এদিকে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জবেদুর রহমান, জাতীয় ৪ নেতা পাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক, দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল আহমদ মতছিন, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ এইচ এম পিরোজ আলী, আওয়ামীলীগ নেতা ও বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, আব্দুল জলিল জালাল, ডা: শানুর আলী, মাষ্টার হানিফ আলী, আব্দুল হামিদ, লিয়াকত আলী, খাজাঞ্চি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিতার মিয়া সহ প্রমুখ।