যুক্তরাষ্ট্রে বহুল কাক্সিক্ষত ভোটগ্রহণ আজ : সর্বশেষ জরিপে ট্রাম্প-হ্যারিস সমানে সমান

আন্তর্জাতিক
শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক :: আজ মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। বহুল কাক্সিক্ষত এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা একেবারে তুঙ্গে। ইতিমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন সাত কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার। মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হলেও কবে জানা যাবে ফলাফল, তা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে অনেকের মাঝে।

জানা গেছে, বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রগুলো রাজ্য ও কাউন্টির উপর নির্ভর করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণ নিয়ম হল যে আপনি যত পশ্চিমে যাবেন, সময় অঞ্চলের পার্থক্যের কারণে দেরিতে ভোট বন্ধ হয়ে যাবে। সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনও হতে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়, কিন্তু আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনও ভোট দিতে থাকেন। ভোট শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে গণনা শুরু হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী কে, তা জানতে হয়তো কয়েকদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে না। ২০১৬ সালে অবশ্য ভোটের পরদিন সকালেই ট্রাম্পকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকার করে নেন হিলারি ক্লিনটন।

তবে অনেক সময় ফলাফল জানতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়। যেমন- ২০২০ সালে ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণের চার দিন পরে জো বাইডেনকে বিজয়ী বলা সম্ভব হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী সাত রাজ্য-অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের ফলাফলের জন্য পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ভোট গণনায় অতিরিক্ত সময়ের দরকার হয়েছিল ওই সময়। এছাড়া ডাকযোগে দেয়া ভোট গণনা করার জন্য নির্বাচনের ফল জানতে আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণার চূড়ান্ত সময়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যম এনবিসি তাদের সর্বশেষ জরিপ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনেই প্রায় একই অবস্থানে রয়েছেন। এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়েই ৪৯ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন এবং শুধুমাত্র ২ শতাংশ ভোটার কোনো মতামত জানাননি।

এনবিসি উল্লেখ করেছে যে, কমলা হ্যারিসের সমর্থকরা গণতন্ত্র সুসংহত করা, গর্ভপাত ইস্যুতে ট্রাম্পের উপর বিরক্ত এবং হ্যারিসের জন্য সমর্থকরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের। টিভি চ্যানেলটির মতে, ট্রাম্পের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থক বিশ্বাস করেন যে জাতি ভুল পথে চলেছে, এ জন্য তারা এবার ট্রাম্পকে ভোট দিতে চান। তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড বিরক্ত। জরিপটি ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ১০০০ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে চালানো হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেছিলেন।

জরিপ অনুযায়ী, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও মজার বিষয় হলো বেশি ভোট পেয়েও হেরে যেতেন পারেন প্রার্থী। কারণ সরাসরি ভোটারদের মাধ্যমে নয়, ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ পদ্ধতিতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় দেশটিতে। এটি অনেকের কাছে কিছুটা জটিল মনে হলেও জয়ের চমক লুকিয়ে থাকে এই পদ্ধতিতেই। প্রতি চার বছর পর পর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দেশটির নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন না। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে পরিচিত একদল কর্মকর্তার পরোক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কলেজ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয় যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল যাদের ইলেক্টরস বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচক মণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন।

কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেটের ইলেক্টরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট আসন সংখ্যা ৫৩৮টি। এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন।
যেভাবে ইলেকটোরাল কলেজ কাজ করে: একজন প্রার্থী সারা দেশে হয়তো কম ভোট পেয়েছেন, কিন্তু বেশ কতগুলো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১ শতাংশ পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলোই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও তারপরেও জয়ী প্রার্থী সবগুলো ইলেকটোরাল ভোটই পাবেন।

ইলেকটোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে যা হবে: কোনো ক্ষেত্রে যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইনসভার নিম্ন-কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এই ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে ১৮২৪ সালে। ১৭৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান যখন প্রণয়ন করা হয় তখন একটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা বাস্তবে অসম্ভব ছিল। এর কারণ ছিল দেশটির আয়তন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পশ্চাৎপদতা।

আর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতারা চাননি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকা আইনপ্রণেতাদের হাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ুক। তারা এই ক্ষমতা দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে তুলে দিতে চাইলেন। তাই সংবিধান প্রণেতারা ইলেকটোরাল কলেজ সৃষ্টি করলেন, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে ইলেকটর দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হল।

সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বেশি জনসংখ্যার অঙ্গরাজ্যগুলো এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে এই বিবেচনায় প্রতিটি রাজ্যে অন্তত তিনজন ইলেকটর থাকার নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। ইলেকটরের এই ন্যূনতম সংখ্যা অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আকারের ওপর নির্ভর করে না। তবে এর বেশি ইলেকটরের সংখ্যা অঙ্গরাজ্যগুলোর জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় নির্ধারিত হয়।

দেশজুড়ে ভোটে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে এ পদ্ধতিতে ছোট অঙ্গরাজ্যগুলোর বেশি বক্তব্য রাখার সুযোগ থাকায় তারা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি সমর্থন করল। ইলেটোরাল ভোটের সংখ্যা অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আকারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হত বিধায় দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো সরাসরি ভোটের চেয়ে এ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব রাখার সুযোগ পাওয়ায় তারাও এ পদ্ধতি সমর্থন করল। কারণ এখানে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ছিল দাসরা। দাসদের ভোটাধিকার না থাকলেও আদমশুমারিতে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের তিন-পঞ্চমাংশ ধরে তাদেরও গণনা করা হত। সূত্র : রয়টার্স, এপি, তাস।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *