যারা বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ নির্মূল করতে চেয়েছিল তারা এখন কান্ডারি !

Uncategorized
শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সময়ের তুচ্ছ ঘটনা, আগামি দিনের ইতিহাস বা ইতিহাসের উপাদান হয়ে যায়। আর যদি এসব ছোট্ট কোন ঘটনা আদর্শিক রাজনীতির হয়, তাহলে রাজনীতিতে যেমন প্রেরণা যোগাবে তেমনি সুবিধাভোগী নিলজ্জ হাইব্রিডদের ধিক্কার জানাবে যুগে যুগে। এমনি ভাবে দুইযুগ আগে বিশ্বনাথের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৯৬ সালের ৮ মার্চ শুক্রকার একটি কলঙ্কময় ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৯১ থেকে ৯৬ সালের ১২ই জুনের আগ পর্যন্ত বিশ্বনাথ আওয়ামীলীগকে নির্মূলের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বিএনপি। যারা আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা এখন বড় আওয়ামীলীগার বা আওয়ামীলীগের কান্ডারি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির বিএনপি বা চার দলীয় জোটের একতরফা নির্বাচন বাতিল ও প্রতিরোধে বিশ্বনাথে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জেগেছিল। তাদেরকে নিমূল করতে তৎকালিন সাংসদ ও তার সহযোগীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। সাজানো মামলা, বাড়ি ঘরে হামলা এবং নেতাকর্মীদের থানায় ধরে নিয়ে ঝুলন্তভাবে মারপিট করেও কান্ত হয়নি। তারা আওয়ামীলীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল।
এ খবর চলে যায়, সিলেটের রাজনীতির দুই দিক পাল আনম শফিকুল হক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামিমের কানে। ইফতেখার হোসেন শামীমের পুরান লেনের বাসায় একাধিক বৈঠক করে বিশ্বনাথের আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা ও দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বলা হয় ৮ই মার্চ যে কোন মূল্যে বিশ্বনাথ থানা সদরে আওয়ামীলীগের মিছিল বের করা হবে। বৈঠকে বিশ্বনাথের জনৈক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্মসুচী না দেয়ায় প্রস্তাব করলে ইফতেখার হোসেন শামীম তাঁকে পাগল বলে আখ্যা দেন। সব প্রস্তুতি শেষে আজ থেকে দীর্ঘ ২৪ বছর পূর্বে ১৯৯৬ সালের ৮মার্চ তৎকালিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজি ইসকন্দর আলীর বাড়িতে সকাল থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। কিছু কিছু নেতা কর্মী পেন্টের পকেটে ইটের টুকরো ও পাথর নিয়ে আসেন। খবর চলে যায় বিএনপির কানে। তারা বিশ্বনাথ পুরান বাজারের জনৈক প্রভাবশালি ব্যক্তির ছাদে ৬টি বন্দুক নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করে।
আনম শফিকুল হক, ইফতেখার হোসেন শামিম, সুজাদ আলী রফিক, বিজিৎ চৌধুরী, তৎকালিন ছাত্রনেতা আজাদুর রহমান আজাদ, জগদীশ দাস সহ সহযোগী সংগঠনের জেলা নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে মিছিলটি যখন বিশ্বনাথ আলীয়া মাদরাসার সামনে আসে, তখন মুহমুহ গুলির আওয়াজে বিশ্বনাথ থানা সদর প্রকম্পিত হয়ে উঠে। সাথে সাথে দোকান পাঠ বন্ধ হয়ে যায়, লোকজন দিক বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। মিছিলটির সামনে ছিলেন জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ। মধ্যখানে ছিলেন উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ। আর পেছন দিকে ছিলেন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। বন্দুকদারিরা মিছিলের সামনের দিকে গুলি না করে পেছন দিকে গুলি করে। এতে সামনের নেতারা পেছনে গুলি হচ্ছে প্রথমে তা বুঝতে পারেননি। এক পর্যায়ে দেখা যায় অনেক নেতাকর্মী রাস্তায় লুটে পড়ে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে যায়। রাতের মধ্যেই অনেক নেতা কর্মী জগন্নাথপুন, ছাতক, ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জ ও সিলেট পালিয়ে যায়। বিশ্বনাথ আওয়ামীলীগ শুন্য হয়ে পড়ে। আহত ৭০ জন নেতাকর্মীদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ওসমানী হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল ক্লিনিকে প্রেরণ করেন। ওসমানী হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডগুলো রক্তে লাল হয়ে যায়। আহতদের তখন চেনার কোন সুযোগ ছিলনা। হাসপাতালে ছুটে আসেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, জহির চৌধুরী সুফিয়ান, আশফাক আহমদ, মাসুক উদ্দিন সহ জেলা নেতৃবৃন্দ। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন, তৎকালিন বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ফিরোজ আলী, সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা এনাম হোসেন বাবলু ও সিতার মিয়া (টেংরা), সায়েক আহমদ (আমতৈল), মঞ্জুর মেম্বার (চানসির কাপন), আবুল গৌছ চৌধুরী (দৌলতপুর), ছাত্র নেতা সুহেল আহমদ (সিলেট), আহসান হাবিব নোয়াব আলী (হরিকলস), আশিক আলী (সেনার গাঁও), শংকর চন্দ্র ধর (মোহাম্মদপুর), মোসাদ্দিক হোসেন সাজুুল, (ভোগশাইল), জামাল আহমদ (বিশ্বনাথ নতুন বাজার), ইউসুফ আলী, তাহিদ আহমদ, ফজলু মিয়া, মোস্তাফিজ সেলিম (বরইগাঁও), হোসাইন আহমদ (সদুর গাঁও), ছাদিক মিয়া (নরশিংপুর), আফছর মিয়া (আতাপুর) মুক্তিযোদ্ধ কমান্ডার আলকাছ আলী (কালিগঞ্জ), মোক্তাদির হোসেন শামীম, লিটন সরকার, বিরেন্দ্র কর, (বিশ্বনাথ বাজার), মখলিছুর রহমান স¤্রাট, তোয়াজিদুল হক তুহিন, গেদুল (লালা বাজার), আব্দুল মন্নান (দশঘর), তৈইমুছ আলী, শফিকুল ইসলাম এ্যাপন (বাউসি), বাবলু (সরোওয়ালা), আব্দুল আলিম রুকন (বরইগাঁও) সহ ৭০জন নেতা কর্মীরা। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে কারো নাম অজান্তে বাদ পড়লে আমরা আন্তরিক ভাবে দু:খিত।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এ এইচ এম ফিরোজ আলী জানান, সেদিনকার ঘটনা স্মরণ হলে গাঁ শিউরে উঠে। একমাত্র আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীরা বেচেঁ যান। কিন্তু এখনও অনেকেই শরীরে গুলির যন্ত্রনা নিয়ে বেচেঁ আছেন। সায়েক আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নিজে লন্ডন পাঠিয়ে চিকিৎসা করান। সায়েকের চোখ একটি নষ্ট হয়ে গেছে।
গুলিবিদ্ধ সিতার মিয়া বলেন, সেময় বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করায় আমরা এরই প্রতিবাদে মিছিলে অংশ গ্রহন করি এবং গুলিবিদ্ধ হই। কিন্তু আজ গুলিবর্ষনকারিরা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদে অবস্থান করলেও আমরা নিজ ঘরে পরবাসী। এই ফরিয়াদ প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর সুযোগও খুজে পাচ্ছিনা।
এ ঘটনায় আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজি ইসকন্দর আলী বাদি হয়ে তৎকালিন সাংসদ ইলিয়াস আলী (নিখোজ) ও বিশ্বনাথ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পংকি খানকে প্রধান আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে আসামিরা মামলা থেকে খালাস পেয়ে যায়। মামলা দায়েরের পর বিএনপি নেতারা সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের বাসায় বাসায় ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের এক আইনজীবি পংকি খানকে জামিন করিয়ে দিলে সাংসদ শাহ আজিজুর রহমান ও স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত শেষে এই আইনজীবিকে দল থেকে বহিস্কারও করা হয়। এ ঘটনায় গুরুতর জখমি অনেককে স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পত্র দিয়ে পিজি হাসপাতারে পাঠিয়ে চিকিৎসা করান।
দীর্ঘ ২৪ বছর পর সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা এনাম হোসেন বাবলু টেলিফোনে জানান, যে পংকি খানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়, সেই পংকি খান আজ আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ায় আমি অত্যন্ত লজ্জিত দু:খিত এবং হতাশ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো উচিৎ। সেই দিনের গুলি শরীরে বহন করে আমি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। বাবলু আক্ষেপ করে বলেন, নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা করতে বিশ্বনাথে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হলাম। এখন আমার খবর কেউ রাখেনা। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাই।
এই ঘটনার পেছনের কাহিনীর জন্য অপেক্ষা করুন। পরবর্তী সংবাদে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *