- ডাক ডেক্স : ৯ মাসের শিশু হাবিবুর জানে না তার মা আকলিমা খাতুন মারা গেছেন। ভাইবোনদের কান্না দেখে সে-ও কাঁদছে। শনিবার সন্ধ্যায় খুন হয়েছেন মা। এ ঘটনায় তাদের বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একসঙ্গে দুই অভিভাবককে হারিয়ে আকলিমা-সুজন দম্পতির সাত সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর থেকে শিশু হাবিবুর মাকে খুঁজছে। মায়ের শোকে অন্য ভাইবোনেরা আহাজারি করছে।
পুলিশ জানায়, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সোনাচং গ্রামে শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রথমে আকলিমা খাতুনের (৩২) হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। আকলিমার বাবার বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার ছনখলা গ্রামে। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অভিযুক্ত সুজন মিয়াকে আটক করে পুলিশ। সুজন উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের সোনাচং এলাকার বাসিন্দা।
রোববার সোনাচং গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আকলিমা-সুজনের বাড়িতে মাতম চলছে। প্রতিবেশীরাসহ আশপাশের লোকজন অসহায় পরিবারটিকে সান্ত¡না দিতে এসেছেন। ভাইবোনদের কান্না দেখে শিশু হাবিবুর এক বোনের কোলে বসে কাঁদছে। পাশে থাকা বোন মমিনা (১০) জানায়, গত রাত থেকে মাকে খুঁজে না পেয়ে ভাই কান্নাকাটি করছে। সে এখনো জানে না মা আর বেঁচে নেই।
মমিনার দেওয়া তথ্যমতে, তারা ৫ বোন ও ২ ভাই। বোনেরা হলো তাহমিনা আখতার (১৫), তানজিনা আখতার (১৩), মমিনা আখতার (১০), সাবিনা আখতার (৮) ও সাহেদা আখতার (৫)। ভাইয়েরা হলো আতাউর (৩) ও হাবিবুর (৯ মাস)। বোনেরা সবাই বড়, ভাই দুটি ছোট।
তাহমিনা আখতার বলে, সম্প্রতি বাবার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর মা অন্যত্র বিয়ে করেন। ওই বিয়ে বাবা সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। বাবার অভিযোগ, মা ছাড়াছাড়ি হওয়ার আগেই বিয়ে করেছেন। বাড়িতে মাকে মারধর করতেন বাবা। এ নিয়ে গ্রামে অনেক সালিস হয়েছে। ঘটনার দিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সে দেখতে পায়, মা রক্তাক্ত। তারা দৌড়ে সেখানে যাওয়ার আগেই সব ঘটে যায়।
তাহমিনা বলে, ‘একদিকে আমরা মাকে হারিয়েছি। অন্যদিকে বাবা এখন জেলখানায়। আমাদের সাত ভাইবোনের এখন কী হবে?’
আকলিমার প্রতিবেশী নূর হোসেন বলেন, পরিবারটি অসহায়। তাদের কোনো জমিজমা নেই। দিনমজুরিতে তাদের সংসার চলত। অভিভাবক ছাড়া সাতটি সন্তান এখন কীভাবে চলবে। রোববার সকালে তাঁরা প্রতিবেশীরা শিশুদের খাবার দিয়েছেন। তবে কত দিনই আর দিতে পারবেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ বছর আগে আকলিমাকে বিয়ে করেন সুজন মিয়া। আকলিমা স্বামী-সন্তান রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোববার সন্ধ্যার আগমুহূর্তে বাড়ির সামনে একটি নারকেলগাছ পরিষ্কার করছিলেন সুজন। তখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আকলিমা। এ সময় একে-অপরকে গালাগাল দিলে সুজন মিয়া তার হাতে থাকা দা দিয়ে আকলিমাকে কোপাতে শুরু করেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আকলিমার বাঁ হাত কনুই থেকে আর ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একইভাবে বাঁ পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আকলিমাকে উদ্ধার করে প্রথমে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথে আকলিমার মৃত্যু হয়।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হক বলেন, আটকের পর সুজন মিয়া পুলিশকে জানিয়েছেন, আকলিমা তার সাবেক স্ত্রী। তিনি ছেলেমেয়েদের রেখে অন্যত্র বিয়ে করায় তাকে তিনি তালাক দিয়েছেন।
শনিবার আকলিমা তাকে গালিগালাজ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার হাত-পা কেটে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।