অনলাইন ডেস্ক :: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি মলিন চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি পশ্চিম এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনা, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে একটি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক ভবিষ্যদ্বাণী’ দিয়েছেন।
এস জয়শঙ্কর বলেছেন, এমন একটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরো শক্তিশালী সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে আনে। কারণ বিশ্বের একটি বড় অংশ নভেম্বরে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
অনেকেরই ধারণা, এ নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন।
দিল্লিতে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমি একজন আশাবাদী ব্যক্তি, সাধারণত সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি, সমাধান থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলো নিয়ে নয়। তবে আমি বলব, অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে, আমরা একটি অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।…(এবং) আগামী পাঁচ বছরে আমি একটি অত্যন্ত খারাপ সময়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছি…মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় যা হতে দেখা যাচ্ছে এবং করোনার চলমান প্রভাব, যা থেকে আমাদের অনেকে বেরিয়ে এসেছি, তারা স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছি…কিন্তু অনেকেই এখনো এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
মধ্যপ্রাচ্যে বা পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার উল্লেখ সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইরানকে ‘পিছিয়ে আসার’ আহ্বান জানিয়ে জোর দিয়েছে। কারণ সেখানে আরেকটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণের পর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইরান ও তাদের লেবানিজ মিত্র হিজবুল্লাহ তাদের কমান্ডার এবং হামাসের রাজনৈতিক নেতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জয়শঙ্করের কার্যালয় এপ্রিলে জানিয়েছিল, দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে কঠিন পরিস্থিতিতে আটকে থাকা ভারত উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছে এবং ‘সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে’ সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। আজকের মন্তব্যেও জয়শঙ্কর সামরিক সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী যে হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে তার ওপর আলোকপাত করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, এটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোতে রূপ নিতে পারে, যেমন গত বছর রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কারণে জ্বালানি ও সারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যে ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে…বেশি বেশি দেশকে সংগ্রাম করতে দেখা যাচ্ছে। বাণিজ্য কঠিন হয়ে উঠছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি রয়েছে…তাই বিভিন্ন ধরনের বিঘ্ন ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
এ ছাড়াও লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের হামলার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের কারণে সৃষ্ট উদ্বেগ সম্পর্কেও কথা বলেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘লোহিত সাগরে যা ঘটছে (এবং) জলবায়ুগত ঘটনা…এগুলো আর শুধু খবর নয়…এগুলো বৈশ্বিকভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে এবং কখনো কখনো পুরো অঞ্চল মূলত অকার্যকর হয়ে পড়ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটায়…শুধু চুক্তি নয়, এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু।’
তবে জয়শঙ্কর মার্কিন নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য দেশের নির্বাচনের বিষয়ে মন্তব্য করি না। মার্কিনরা তাদের রায় দেবেন। গত ২০ বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে, আমরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে পারব…তিনি যেই হোন না কেন।’
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটদের জন্য দেরিতে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিতর্কের পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। হ্যারিসের মুখোমুখি হচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন, এবং যাকে ইতিমধ্যে দুবার অভিশংসন করা হয়েছে।
সূত্র : এনডিটিভি