বিশ্বে মানবিক একজন রাষ্ট্র প্রধানের নাম শেখ হাসিনা

Uncategorized
শেয়ার করুন

এ্এইচএম ফিরোজ আলী: ১৭মে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দিন। এ দিন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৮১সালে ১৭মে তিনি দেশে ফিরে ছিলেন। দেখতে দেখতে ৪০টি বছর পেরিয়ে গেল। দেশে ফিরে চার দশক ধরে তিনি উপমহাদেশে সবচেয়ে প্রাচীনতম বৃহত্তর রাজনীতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামীলীগ চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়েছে। শুধু রাষ্ট্র ক্ষমতা নয়, এদেশের মানুষের আর্ত সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এবং বাংলা ও বাঙালির মান মর্যাদা বিশ্বে বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি এখন বিশ্বের বিবেকবান চার রাষ্ট্র প্রধানের একজনের খ্যাতিঅর্জন করেছেন। শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দক্ষ নেতৃত্বের কারনে বিশ্বের চোখ এখন বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশের উন্নয়নে পৃথিবীর অনেক দেশ অনুসরণ করছে। নবপ্রজন্মের অনেকেই জানে না যে, কত আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়।
শেখ হাসিনা যে দিন দেশে ফিরেন, সেই দিন শেষ মুুহুর্ত পর্যন্ত তাঁকে বাধা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সকল বাধা ও সামরিক জান্তার লাল চোখ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুকি নিয়ে বাংলার মানুষের কাছে ফিরে আসেন। ১৯৮১সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় সম্মেলনে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং আজ ৪০বছর যাবত তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা পিতার ঘোষিত সোনার বাংলা বির্ণিমানে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। যে কারনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭৫সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার সময় শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহেনা দেশের বাইরে জার্মানিতে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কাছে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৬ বছর পর শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসা ছিল খুনিদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার প্রথম প্রতিবাদ। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে যত রকম বাধার প্রয়োজন ছিল, ততটুকু প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা জনতার ভালবাসার স্রোতের কাছে পরাজিত হয় সকল বাধা। ১৯৭২সালের ১০ জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর দেশের মাটিতে ফিরে আসায় যেমন জনতার স্্েরাত হয়েছিল, ঠিক তেমনি ভাবে ১৭মে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন বাংলার আকাশও কেঁদে ছিল। প্রচন্ড ঝড়, বৃষ্টির মাঝে লাখো জনতা শেখ হাসিনাকে মিছিলে মিছিলে বরণ করেছিলেন। সেদিন জনতার মুখ স্লোগান ছিল, ‘ শেখ হাসিনার ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, শেখ হাসিনার ভয় নাই’ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরিনাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম ইত্যাদি স্লোগানে স্লোগানে রাজধানী ঢাকাকে কম্পিত করে তুলা হয়েছিল। শেখ হাসিনার আগমনের সংবাদ আগেই আকাশ বাণী প্রকাশ করেছিল। শেখ হাসিনার আগমনে সারা দেশে আনন্দ উচ্ছাসের মাঝে বেদনার অজানা চাপ ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। সারা দেশে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিল। সিলেটেও শেখ হাসিনাকে বরণ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। প্রতিদিন শহরের কলেজগুলোতে মিছিল করা হতো। সেই মিছিলের একজন তরুণ কর্মীই ছিলাম আমি নিজেই। শেখ হাসিনার দেশে ফেরার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি হয়েছিল পরিবর্তনের এক অভিঘাত। জাতির পিতাকে হত্যার পর বাঙালি প্রকাশ্যে এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলতে পারেনি। কিন্তু ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে চোখের জল ঢেলে নিজেকে শান্তনা দিয়েছিল বাঙালি। সে সময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের পায়ের রগ কেটে দিত একটি জঙ্গী সংগঠন। সে সময় এই রগ কাটা বাহিনীর নাম সবাই জানতো। ইতিহাস বিকৃতির মহা উৎসব ছিল সেই সময়ে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার কারনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল। দেশটাকে উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছেন। ঘরে বাইরে বৈরিতা থাকা স্বত্বেও সব কিছু মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর নেতা কর্মীদের মধ্যে যে আবেগ উচ্ছাস, আস্থা, বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, আজ অবধি ধরে রেখেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর সাহস, সততা, দৃঢ়তা এবং রাজনৈতিক বিচ্চক্ষণতার নিকট পরাভূত হয়েছে সব ষড়যন্ত্র।
শেখ হাসিনার জীবননাশের জন্য কম পক্ষে ২১বার হামলা হয়েছিল। জাতির পিতার কন্যাই এদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হন। ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে গেলেও আহত হন তিনি। ১৯৮৮সালের চট্টগ্রামে লালদিঘী ময়দানেও হামলার টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালি পাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রাখা হয়েছিল তাকে হত্যার জন্য। ২০১৩ সালের ৫মে এবং ২০২১সালে এসে হামলার লক্ষ্য বস্তুতে ছিলেন শেখ হাসিনা ও তার সরকার। কারাবরণ, কারানির্যাতন, সাজানো মিথ্যা মামলায় হয়রানী সত্বেও দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে চলেছেন সেই ছাত্র জীবন থেকে রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ৮ মাস কারাবন্দি ছিলেন সপরিবারে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় সংগ্রামে সামনের সারীর যোদ্ধা ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৭ সালে সেনা শাসিত সরকারের আমলেও জেলে বন্দি ছিলেন তিনি।
আমার জীবনে জাতির পিতাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার সাথে কমি বেশি ৩/৪বার দেখা হয়েছে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে যথসামান্য স্মৃতির কথা তুলে ধরতে হয়। ১৯৮১সালে এসএসসি’র ফলাফল ঘোষনার পর মদন মোহন কলেজে ভর্তি হই। শহরের আসা এক অজানা যুবক কারও সাথে তখন তেমন পরিচিতিও ছিল না। ছাত্র রাজনীতি ছিল ঝুকিঁপূর্ণ। তবে মদন মোহন কলেজে রাজনীতি ছিল একেবারেই তুঙ্গে। প্রতিদিন মিছিল মিটিং হয়েছে। মে মাসের ২য় সপ্তাহে কলেজের অধ্যক্ষ বাবু কৃষ্ণ কুমার পাল চৌধুরী কিছু ছাত্রদের জানালেন এ মাসেই শেখ হাসিনা দেশে আসতে পারেন। এ থেকে বেশি কিছু বলেননি। আমরা কয়েকজন মিলে আম্বরখানায় রাজন ভাইয়ের হোটেলে চলে যাই। তিনি ১৫ অথবা ১৬ মে সবাইকে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে জানালেন এবং আগে ভাগেই মেইল ট্রেনের টিকেট কাটার পরামর্শ দিলেন। তখন আন্তনগর ট্রেন বা ভাল বাসের যাতায়াত ছিল না। ১৫ তারিখ রাতে সিলেট পুরাতন রেল স্টেশনে মেইলে সবাই উঠে বসেন। ট্রেন ছাড়ার আগেই মানুষের গাদাগাদি ঠেলাঠেলি মারামারি শুরু হয়ে যায়। একজন সিটের উপর বসে লোকজনকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রস্রাব করে দেয়। অনেকের সাথে রাগ করে আমিও ট্রেন থেকে নেমে পড়ি। পায়ে হেঁটে রাত ৩টার দিকে বাড়ি গিয়ে পৌছি। দূরভাগ্য শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মিছিলে যোগদান করতে পারিনি।
দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ১২জুনের নির্বাচনে ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব ও সফল কুটনৈতিক তৎপরতার কারনে আর্ন্তজাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্র সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। বঙ্গোপসাগরে ১লক্ষ ১৮হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকার উপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমা সম্ভাবনাময় সকল সম্পদ আহরনে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০১৮ সালে ভারত ও চীনের সঙ্গে ব্লু-ইকোনমিক এবং মেরিটাইম খাতের মানোন্নয়নের সহযোগিতার বিষয়ে দুটি সমযোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত স্থল সীমানা চুক্তি, ১৯৭৪ এর প্রটোকল স্বাক্ষর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় ১১১টি ভারতের ছিট মহল বাংলাদেশের এবং আমাদের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অংশে চলে যাওয়ায় দীর্ঘ দিনের বদনাম ঘোচাতে পারে আওয়ামীলীগ। ১৯৭৪ সালের পর থেকে শোনা গিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু ভারতের নিকট দেশ বিক্রি করে দিয়েছেন। ছিটমহল মীমাংসার পর আওয়ামীলীগ বিরোধীদের মুখ থুবড়ে যায়। করোনা সংক্রমনের পর অনেকেই বলেছিলেন, বিপুল সংখ্যক লোক কর্মহীন হয়ে যাবে এবং দেশে মহামারী দেখা দিতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখনও বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সাময়িকি ফোবস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে করোনা যে কয়েকটি দেশ লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে খোদ যুক্তরাজ্যও নিতে পারেনি। অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব ব্যাপী উৎপাদনে স্তবিরতা থাকলেও বাংলাদেশে ৫.২৪ শতাংশ হারে জিডিবির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিস্ময়কর অগ্রগ্রতি এখন বাংলাদেশে। রির্জাভ সর্বকালের রের্কড ভঙ্গ করেছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা এমন এক ব্যক্তি যিনি নিয়মিত পড়াশুনা করে সব কিছু যেনে শুনে, বুঝে কথা বলেন। পিতার মতো গরিবের প্রতি তাঁর অসীম দরদ রয়েছে। বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনাই পারে। শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব পরিমন্ডলে তাঁর মেধা, সাহসিকতা ও মানবিকতার মূল শক্তি হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন বিশ্ব নেতায় পরিনত হয়েছেন। নিজের কোন স্বার্থ নয়, দেশ ও জাতির কল্যাণে মৃত্যুকে ভয় না করে ঝুকিপূর্ণ জীবন নিয়ে পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের হাল ধরেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রেই উপনিত হবেই। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক: সদস্য সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ ও কলামিষ্ট।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *