স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা মুল্যের চাউল বিতরণে অনিয়ম, দূর্নীতি, কালো বাজারে বিক্রি করে হরিলুটের বিষয়ে গত (১৬ জুন) ‘বিশ্বনাথেরডাক ২৪ডটকমে’ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও প্রশাসনে তুলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। এ নিয়ে গত দুইদিন যাবৎ সাধারণ মানুষ, সচেতন মহল, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে। ১০ টাকা মূল্যের গরিবের চাউল আতœসাতের বিষয়টি ছিল ‘টক অবদি উপজেলা’। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই মোবাইল ফোনে গরিবের চাউল লুটের সংবাদ প্রকাশ করায় পত্রিকা কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। চাউল লুটের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের কিছু লোকজন সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুংকারও দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন চাউলের অনিয়ম দূর্নীতির বিষয় তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন ও খাদ্য কর্মকর্তা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া।
এদিকে কয়েকজন ডিলার তাদের কাছে রক্ষিত কাড বিভিন্ন কৌশলে কার্ডদারিদের মধ্যে পৌছে দেয়ার চেষ্টা করছেন। গ্রামের সহজ সরল প্রকৃতির লোকজন কার্ডে কি লিখা আছে তা পড়তে না পেরেই রেখে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ রাখছেন না। এদিকে লামাকাজি ও রামপাশা ইউনিয়ন থেকে কয়েকজন কার্ডধারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ উর্ধতন বিভিন্ন মহলের নিকট চাউল আত্নসাৎকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অভিযোগ দাখিল করেছেন। লামাকাজি ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের আসবর আলীর পুত্র দিলোয়ার হোসেন অভিযোগে বলেন, আমার ইউনিয়নের তালিকায় ক্রমিক নং-১৪৩। তিনি বলেন, ৬নং ওয়ার্ডের মিলন মেম্বার আমার বাড়িতে এসে কার্ড দিয়ে গেছেন। আমি কার্ড হাতে নিয়ে দেখি একাধিক টিপসই দেয়া। আমি মেম্বারকে বললাম আমি স্বাক্ষর জানি টিপসই কেন। তিনি বলেন, টিপসই ছাড়া চাউল পাওয়া যায়না। একই অভিযোগে একই গ্রামের ওয়ারিছ আলী অভিযোগে বলেন, আমি একজন রিক্সা চালক। ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মকছুছ মিয়া মিলন প্রায় দিন আমাকে দিয়ে তার বাড়িতে সরকারি ৪/৫ বস্তা করে চাউল পাঠাতেন। একদিন আমি মেম্বারকে বলি সরকারি একটা চাউলের কার্ড দেন। পরদিন মেম্বার আমাকে একটা কার্ড দেন। কার্ড নং ১৪৮। আমার কার্ডে একাধিকবার টিপসই দেখতে পাই। পরে বুঝতে পারলাম আমার টিপসই জালিয়াতি করে ডিলার ও মেম্বার চাউল আত্নসাৎ করছেন।
রামপাশা ইউনিয়নের ডিলার হচ্ছেন জমসের পুর গ্রামের লাল মিয়ার পুত্র দুদু মিয়া। তার বিরুদ্ধে রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর পুত্র নিজাম উদ্দিন নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগে বলেন, রামপাশা ইউনিয়নের তালিকায় আমার ক্রমিক নং-১৪৮। আমি চার বছরে মাত্র ২বার চাউল পেয়েছি। ডিলার আর আমাকে কোন চাউল দেয়নি। কার্ডের কথা জানতে চাইলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। একই অভিযোগে মনোহরপুর গ্রামের শিল্পী বেগমের স্বামী আফিক আলী তার ক্রমিক নং-১৫৯। তিনি অভিযোগে বলেন আমি ২বার চাউল পেয়েছি। পরবর্তীতে ডিলার আমার কার্ড বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন। একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পুরানগাঁও গ্রামের ফজরুন নেছার পুত্র রফিক আলী তার অভিযোগে বলেন, তার মায়ের কাডের ক্রমিক নং-১৯৯। আমরা কোনদিন ডিলারের কাছ থেকে ১০ টাকা মূল্যের চাউল পায়নি। আমাদের চাউল আত্নসাৎ করা হয়েছে। একই গ্রামের মৃত ওয়াব আলীর পুত্র আব্দুর রহিম বলেন, আমার ১০ টাকা মূল্যের চাউলের তালিকার ক্রমিক নং ২০০। আমি ২ বার স্বাক্ষর দিয়ে চাউল তুলেছি। আর কোন চাউল পায়নি। ডিলার জানিয়েছে চাউল আসলে আমাকে জানানো হবে। এভাবেই অসহায় দরিদ্র লোকদের সাথে প্রতারনা ও জালিয়াতি করে প্রধানমন্ত্রী সরকারের ঘোঘিত চাউল আত্নসাৎ করা হয়েছে।
খাদ্য অফিসের তথ্য মতে লামাকাজি ইউনিয়নের ডিলার হচ্ছেন, সুনাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হান্নানের পুত্র সুহান আহমদ। কিন্তু একটি কাডের্ দেখা গেছে ডিলারের নাম সায়েম আহমদ রায়হান। এই রায়হান ২৯০১৮ সালে প্রবাসে রয়েছেন। ইউনিয়নের তালিকার দূলভপুর গ্রামের মৃত রাশিদ আলীর পুত্র আব্দুল মন্নান কয়েক বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাহার ক্রমিক নং ১৯৫। উদয়পুর গ্রামের গোলাম হাদি মৃত্যু বরণের পর স্ত্রী সাহানারা বেগম পিত্রালয়ে ছাতক অবস্থান করছেন। ক্রমিক নং ১০৫। নতুল্লাপুর গ্রামের ইরন মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগম সৌদি আরবে রয়েছেন। ক্রমিক নং ৮৬। বাহাদুর মালা গ্রামের দিপেন্দ্র দাসের স্ত্রী শোষমা রানী দাসও মারা গেছেন। ক্রমিক নং-৯৮। এদের নামিয় ১৮ বারের চাউল খায় কে? উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান।
আরো জানতে আমাদের সাথে থাকুন