স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় করোনা সংকটময় সময়ে ত্রান পেতে আওয়ামীলীগার হওয়ার হিড়িক পড়েছে। সবাই এখন আওয়ামীলীগার। সম্প্রতি সরকারের নির্দেশনা মতে, প্রতি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ২০০ জন অসহায় গরিব কর্মহীন লোকের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ৮ টি ইউনিয়নের ৭২টি ওয়ার্ডের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় স্বচ্ছ ও স্বাবলম্বী প্রকৃতির জামাত-বিনপির অধিকাংশ লোকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রকৃত অর্থে করোনা দূর্যোগে কর্মহীন অনেক অসহায় পরিবার বঞ্চিত হয়েছেন। বিশেষ করে যারা সারা জীবন আওয়ামীলীগ করে তার সরকারের আমলে সহায়তার তালিকায় নাম লেখাতে না পেরে অনেক কর্মী হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর অন্য দলের লোকজন খুশি মেজাজে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের অনেক কর্মী বলেছেন, বর্তমান সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামীলীগের একজন লোককে সহায়তা দিত না। কিন্তু আওয়ামীলীগের সময়ে বিএনপিরা দাপট দেখাচ্ছে বেশি। ত্রান তালিকায় কৌশলে পুরুষের নাম না দিয়ে অনেক ওয়ার্ডে মহিলাদের নাম দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ত্রান নয় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, গর্ভবতী ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি দশ টাকার চাল সহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যাবতীয় সুবিধা খায় এবং বদনাম ও গায়। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ায় নব্য আওয়ামীলীগাররা। এ বিষয়টি এখন বিশ্বনাথে “টক অব দি উপজেলা”। সর্বত্র এক আলোচনা, হঠাৎ করে এতো আওয়ামীলীগ বৃদ্ধি হলো কিভাবে? নব্য আওয়ামীলীগারদের ঠেলায় ত্যাগী আওয়ামীলীগাররা এখন কোনঠাসা
অনেকে বলেছেন, বিএনপি জামাত কৌশলে এখন লেবাস বদলাচ্ছে। সময় এলে তাদের চেহারা দেখা যাবে। ৮ ইউনিয়নের মধ্য পাঁচজন চেয়ারম্যান বিএনপির এবং ৭২টি ওয়ার্ডে মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন আওয়ামীলীগের মেম্বার রয়েছেন। বাকি সব জামাত-বিএনপি। উপজেলা আওয়ামীলীগের বড় পদটি দখল করে আছেন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং এই কমিটিতে আরো ১২/১৪টি পদ দখলে আছে জামাত-বিএনপি। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় আওয়ামীলীগের ক্ষমতা জামাত-বিএনপির হাতে। অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে প্রকৃত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কোনঠাসা।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক দুই নং খাজাঞ্চি ইউনিয়নের ফুলচন্ডী গ্রামের সমর কুমার দাশ বলেন, আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কমিটিতে বিএনপির লোক থাকায় আওয়ামীলীগের গরিব কর্মী বা সাধারণ কর্মহীন লোকদের নাম বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করার অনেক অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু করার কিছুই নেই।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কমিটির অন্যতম সদস্য অলংকারী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের গোলাম নূর বলেন, আমার এলাকায় ইতিপূর্বে যারা বিএনপির পক্ষে ছিলো, বিএনপিকে ভোট দিয়েছে তারা এখন আওয়ামীলীগের বড় নেতা। গরিব লোকদের বাদ দিয়ে বিএনপি নেতাদের মহিলাদের নাম ত্রানের তালিকায় দেয়া হয়েছে যাতে পরিচয় পাওয়া না যায়। এ নিয়ে সাধারন মানুষ হাসাহাসি করছে।
একই ইউনিয়নের টেংরা গ্রাম নিবাসী কেন্দ্রীয় ছাএলীগের সাবেক সদস্য সিতার মিয়া জানান, বিভিন্ন নির্বাচনে যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকার পক্ষে ছিলাম তখন যারা আমাদের খুন করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করেছিলো তারা বড় আওয়ামীলীগার। ত্রানের তালিকা ও দশ টাকার চালের কার্ড দেয় এসব ব্যক্তিরা।
দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের বিগত সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী ফখরুল আহমদ মতছিন বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামীলীগে বিএনপি এনে দলকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিএনপি এখন আওয়ামীলীগে এসে দাপট দেখাচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপির একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি ত্রান সহ সরকারের বিভিন্ন সুবিধা গ্রহন করছে আর আওয়ামীলীগের কিছু লোক দেখে ও তা না দেখার ভান করছেন।
রামপাশা ইউনিয়াম আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ শরীফ বলেন, আমার ৬নং ওয়ার্ডে ত্রানের তালিকায় আওয়ামীলীগের গরিব কর্মী বাদ দিয়ে বিএনপির নাম দেয়া হয়েছে। এদের অনেকেই উপজেলা পরিষদ পুড়ানোর ঘটনা ও নাশকতায় জড়িত ছিলো। ইউনিয়ন সভাপতি বরাবরে লিখিত দিয়ে ও কোন কাজ হয়নি। ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইরশাদ আলী বলেন, আমাকে না জানিয়ে অন্য দলের লোক নিয়ে ত্রানের তালিকা করা হয়েছে। দলের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের জানানোর পর ও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সবকিছু এখন হাইব্রিডদের দখলে।