বিশ্বনাথে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতা নিখোঁজ : একজনের মৃত্যু-অপরজনের ৬মাসের কারাভোগ

Uncategorized
শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বনাথ ব্রাক ব্যাংকের একটি ঋনের, ঋণ গ্রহীতা নিখোজ, একজন স্বাক্ষীর মৃত্যু, অপরজন ৬মাসের কারাভোগ করেছেন। এ ঘটনায় সমগ্র উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋন উত্তোলনের বিষয়ে মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাক ব্যাংকের একজন ঋণ গ্রহীতা ও দু’জন স্বাক্ষীর বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করায় এলাকাবাসি চরমভাবে উত্তেজিত। এখানে ব্রাক ব্যাংক সহ অনেক ব্যাংক ঋণ গ্রহনে মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে হয়রানি করে থাকে। এমন অনেক ঘটনা বিশ্বনাথে ঘটছে। ১৭% সুদে ঋণ দিয়ে একটি ঋণের, ঋণ গ্রহীতা ও ঋণের আবেদনে ২জন স্বাক্ষীকে মামলার আসামি করে ব্রাক ব্যাংক ৩টি পরিবারকে ধবংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এদেশে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রভাবশালিরা দেউলিয়া হলেও তাদের কোন কিছুই হয়না। কিন্তু নিরক্ষর, অসহায় লোক ঋণ গ্রহীতা ও ব্যাংক কর্মকর্তার অনুরোধে স্বাক্ষর করায় একজনের মৃত্যু, অপরজনকে ৬ মাসের কারাভোগ করতে হয়েছে। শুধু তাই নয় তাদের স্ত্রী পুত্ররা এখন একেবারে পথে নেমে গেছে।
মামলার নথিপত্র ও এলাকাবাসি সহ বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাঠলি পাড়া গ্রামের মৃত যদেশ্বর (যন্যেস্বর) মালাকারের পুত্র রাধা মালাকার বৈরাগী বাজার মেসার্স চুমকি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দোকানের নামে ১৭% সুদে বিশ্বনাথ ব্রাক ব্যাংক শাখা থেকে ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর ৬ লাখ ৫০ হাজার ৫৪৮ টাকার ঋণ গ্রহণ করেন। এই ঋণের আবেদন ফর্মে রাধা মালাকারের ভাই রাখাল মালাকার ও একই গ্রামের হামিদ আলীর পুত্র নিরক্ষর মখলিসুর রহমান স্বাক্ষীর কলামে স্বাক্ষর করেন। ঋণ গ্রহনের সময় স্বাক্ষী দিলেও এ ঋণের টাকা স্বাক্ষীগন পরিশোধ করতে হয়, এমন কথা তারা কোন দিন জানতেন না। রাধা মালাকার ঋণের টাকা প্রতিমাসে ৩২ হাজার ২৯৫ টাকা হিসেবে ২৪ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। তিনি ১লাখ ৯২ হাজার টাকা ঋণও পরিশোধ করেছিলেন।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের পর হতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করতে পারায় ব্যাংকের ক্রমাগত চাপ ও নোটিশের কারনে মানুসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন রাধা মালাকার এবং এক পর্যায়ে স্ত্রী পুত্রকে বাড়িতে রেখে তিনি দেশান্তর হয়ে যায়। তার পর পুলিশের হাতে একবার ধরাও পড়েন। জেল থেকে বের হওয়ার পর আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্ত্রী পুত্ররা অনাহারে দীর্ঘদিন দিনাতিপাত করার পর এক পর্যায়ে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ব্রাক ব্যাংক টাকা উদ্ধারের জন্য ২০১৫ সালে সিলেটের অর্থঋণ আদালতে ঋণ গ্রহীতা রাধা মালাকার তার ভাই রাখাল মালাকার ও স্বাক্ষী মখলিসুর রহমানকে আসামি করে ১৩ লাখ ৪৬ জাহার ২৬৪ টাকা ঋণ পরিশোধের মামলা দায়ের করেন (অর্থঋণ মামলা নং-০৫/২০১৫)। স্বাক্ষী রাখাল মালাকার দীর্ঘদিন পলাতক থাকাবস্থায় মানুসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এক পর্যায়ে অপর স্বাক্ষী মখলিসুর রহমানকে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। টাকার অভাবে আদালতে মখলিসুর রহমানের জামিনের আবেদন করতে পারেনি তার পরিবার। ফলে পুরো ৬ মাস সাজা ভোগ করে বেরিয়ে আসেন মখলিসুর রহমান। তার পরও ব্রাক ব্যাংক তাদের পিচু ছাড়েনি। তারা ঋণ পরিশোধের জন্য একটি জারি মোকদ্দমাও আদালতে দায়ের করেন, (মামলা নং-১৩/২০১৭)। এখন মুল ঋণ গ্রহীতা রাধা মালাকার নিখোজ, তার ভাই স্বাক্ষী রাখাল মালাকার ব্যাংক ঋণের কারনে মৃত্যু বরণ করেন। অপর স্বাক্ষী অসহায় নীরিহ মখলিসুর রহমান মামলা আতঙ্কে দিন যাপন করছেন। ঋণ পরিশোধে মখলিসুর রহমানের কোন সহায় সম্পত্তি নেই ।
সরেজমিনে গেলে গ্রামবাসিরা জানান, ঋণের কারনে মখলিসুর রহমান আত্মহত্যা করতে পারেন। একথা এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে উচ্ছারিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসি ৩টি পরিবারকে রক্ষা করতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের জরুরীভাবে দৃষ্টি কামনা করেছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *