বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী : দলের ত্যাগীদের হাতে ক্ষমতা থাকতে হবে

Uncategorized
শেয়ার করুন

এ এইচ এম ফিরোজ আলী,

আজ ২৩ জুন।বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী। এ দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় ও বরণীয় দিন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনের ঐতিহাসিক দিনে এ দলটি প্রতিষ্টিত হয়।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে বাংলার নবাব সিরাজ উদদৌলার বেইমান বিশ্বাস ঘাতকদের হাতে পতন ঘটে। সেই হারানো ইতিহাসকে পূণরুদ্ধারের জন্য ঐতিহাসিক ২৩ জুন আওয়ামীলীগের জন্ম হয়। দক্ষিণ এশিয়া তথা এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম দল আওয়ামীলীগের গতি প্রকৃতি ইতিহাস স্বাধীন বাংলার জন্ম মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মুক্তির সংগ্রামে দলটি ওতোপ্রতভাবে জড়িত। এদেশের মানুষের নাড়ির সাথে দলটির সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এ দুটি সমার্থক শব্দ। দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত তথা প্রকৃতিতে মিশে আছে বাংলাদেশের প্রতিষ্টাতা শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্টায় সে সময় সু কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঙালি নেতারা ‘পূর্ব পাকিস্তান আওমী মুসলীমলীগ গঠন করেন। দলটি এখন এদেশের মানুষের মাতৃ সংগঠন।

বৃট্রিশ বেনিয়াদের বিদায়ের পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাষকরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এমনকি জাতীগত ভাবে এদেশের মানুষকে অবহেলা বঞ্চনা এবং নির্যাতনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্টিত হয়। ঐতিহাসিক ২৩ জুন এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনে মওলানা ভাষানিকে সভাপতি ও টাঙ্গাইলের সামসুল হক নামে খ্যাত সামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে, সেদিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীমলীগ গঠন করা হয়। কারাগারে বন্ধি থাকাবস্থায় দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইতিহাসের বিশ্বাস ঘাতক ও বেঈমান খন্দকার মোস্তাক আহমদ। নতুন দলটি গঠনের খবর পেয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্টি চরমভাবে ক্ষীপ্ত হয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারর্দী ও ভাষানিকে ভারতীয় চর বলে বাঙালিদের মধ্যে বিবেক সৃষ্টির চেষ্টা করে।

সকল বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন এ ওয়ার্কিং কমিটি খুব তাড়াতাড়ি সংগঠনটিকে শক্তিমান একটি দলে পরিণত করেন। তার পর দলের নেতাকর্মীদের উপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ জুন লাহোরে বিরুধী দল গুলোর এক কনভেনশনে বাংলার মুক্তির সনদ ৬ দফা পেশ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ৬ দফা ছিল এদেশের মানুষের মুক্তির মূল সনদ। ৬৬ সালের ৭ জুন বাংলার সাধীকার ও বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব সহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে হরতাল পালিত হয়। ৭ জুনের হরতাল এতটাই সর্বাত্বক হয়েছিল যে, স্বৈরশাসক আয়ুব খানের ভীত নড়বড় হয়ে যায়। জনমত তৈরীতে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করায় পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধির ৩২ (১) ধারায় তফাজ্জুল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেফতার এবং দ্যা নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করেন। ৮ মে বঙ্গবন্ধু কারাগারে আটকের পর একের পর এক মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ও ৬ দফার বিরুদ্ধে বিষোদাগার করে পাকিস্তান সরকার।

কিন্তু তাতে একটুও নড়েননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার পর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্তব্দ করে রাখার চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ৬ দফার পক্ষে বাংলার মানুষকে স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন। অবশেষে পাকিস্তান সরকার জনরোষে পড়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রয়ারি ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সাবেক ছাত্রনেতা ডাকসুর ভিপি আমাদের জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভুসিত করেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে।

১৯৭১ সনের ৭ মার্চ স্বাধীনতার এক মোহেন্দ্র ক্ষন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ১৮ মিনিটের দুনিয়া কাপানো এক ভাষনে তার বাঙালিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানালেন। তিনি বললেন আওয়ামীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। তার এই ভাষনের পর সমগ্র দেশে মানুষ লাটি সোটা, দ্যা, সুলফি নিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামে ৩০ লাখ শহীদ আর ৩ লাখ ইজ্জত হারানো মা বোনদের সভ্রমের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়। এদেশের মাটিতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের রক্তে জমি উর্বরা হয়েছে। মাটির নিচে এখনও হাজার হাজার কঙ্কাল ও হাড়গোড় ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ উল্টো দিকে চলতে থাকে। ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেচে যান। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারতে নির্বাসিত থাকার পর দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের ৪ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা তার জীবনের সকল সুখ ত্যাগ করে এদেশের মানুষের কল্যানে ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে দিবানিশি কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে প্রতিক্রিয়াশিল চক্র হত্যার জন্য কমি বেশি ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? বর্তমান বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এদেশের মানুষকে রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

যেখানে দূর্নীতি সেখানেই তার বলিষ্ট পদক্ষেপ। দূর্নীতিবাজদের আতংক এখন শেখ হাসিনা। প্রতিষ্টা বাষির্কীর এ দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতি সবিনয় নিবেদন যে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় দলে বিভিন্ন শ্রেণীর কাউয়া, হাইব্রিড ও বসন্তের কোকিলরা দলে এসে শিকড় গেড়ে বসেছে। তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, মাদক ব্যবসা, জোয়া, জমি দখল, ইয়াবা ব্যবসা, কমিশনে নিয়োগ বদলি ত্রানের চাউল চুরি, টাকা চুরি সহ সবধরনের অপকর্ম করে দলের সরকারের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করছে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *