অনলাইন ডেস্ক :: রাজধানীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল এক বছরেও চালু করা সম্ভব নয় এমনটা বলা হলেও মাত্র ৩৭ দিনের মাথায় আবারো চালু হলো এটি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল নিয়ে মিথ্যার খেলায় মেতেছিলো একটি মহল। তারা দেশের সাধারণ মানুষ ও মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক চারিতার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। ততকালীন হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে মেট্রোরেল নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করায় লিপ্ত ছিলো। হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে এক বছর সময় লাগার কথা থাকলেও বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধের মাত্র ৩৭ দিনেই মেট্রোরেল চালু করতে পেরেছেন। এটা এই সরকারের ইতিবাচক দিক হিসেবেই বিবেচনা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
সেসময় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনটি পরিদর্শনে গিয়ে একপর্যায়ে স্টেশনে কেঁদে ফেলেন তিনি। যা পরবর্তীতে মায়া কান্না হিসেবে প্রকাশ পায়। ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল এক বছরেও চালু করা যাবে না বলে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে সময় তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালু এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না বলে এক্সপার্টরা জানিয়েছেন। কবে নাগাদ মেট্রোরেল চলাচল শুরু হতে পারে জানতে চাইলে কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, ওই সিদ্ধান্তের ওপর আমরা পর্যায়ক্রমে যেখানে যা করার সেটা করব। তার সিদ্ধান্তের আগে আমরা কোনো কিছু করতে চাই না। তিনি সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সবকিছুর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তার কাছে আছে। কী অবস্থায়, কখন, কোনটা চালু করা যাবে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তারপর মেট্রোরেল চালু করতে এক বছর সময় লাগবে বলে জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পরবর্তীতে মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ ৩০০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও মেরামত করতে এক বছর লাগার বিষয়টি ছিলো লোক দেখানো। এমন পরিস্থিতিতে মেট্রোরেল চলাচলের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনায় আসে।
বন্ধ থাকার পর মেট্রোরেল চালু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এখন নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যে যাত্রা করতে পারছেন তারা। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিরপুর-১০ নম্বর ও কাজিপাড়া স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দুটি স্টেশন চালু হতে সময় লাগবে। তাই এ দুটি স্টেশন বাদ দিয়ে বাকি স্টেশনগুলোতে রোববার সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু করে মেট্রোরেল।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে করে সচিবালয় স্টেশনে আসেন আকরাম। মেট্রোরেল থেকে নেমে তিনি বলেন, গত বছর মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এই গণপরিবহনে যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম। মাঝে ৩৭ দিন মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ২৫ মিনিটের রাস্তা যাতায়াতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগেছে। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে খুবই আনন্দ কাজ করছে। সবার একটাই চাওয়া, মেট্রো চলাচল যাতে আর বন্ধ না হয়।
মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, আমি নিয়মিত মতিঝিল যাই মেট্রোতে করে। এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। মাঝখানে বন্ধ থাকায় বেশ ঝামেলা হয়েছে। বাসে যেতে দীর্ঘ সময়, যানজট। এখন আবার ট্রেন চালু হওয়ায় আমাদের ভোগান্তি কমল। এটা চালু হওয়ায় আমাদের এলাকায় প্রাণ ফিরে এসেছে। কিছু মিথ্যা তথ্যও সামনে চলে এসেছে। বলা হচ্ছিল মেট্রো চালু হতে অনেক সময় লাগবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেগুলো ভুল বা অপতথ্য ছিল।
প্রথম দিনের ট্রেন চলাচল পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সচিবালয় স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ভাঙচুর ঠেকাতে মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কেপিআইয়ের (কি পয়েন্ট ইন্সটেলশন) মাধ্যমে মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা ঘোষণা করা হবে বলে জানান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এটা যাতে ভাঙচুর না হয়, সে জন্য এটাকে কেপিআই হিসেবে একটা আপগ্রেট করার চেষ্টা করছি, যাতে এটার নিরাপত্তা বাড়ে। এবং এটাকে একটি এসেনশিয়াল সার্ভিস হিসেবে ডিক্লার করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, যাতে করে কেউ এভাবে সার্ভিসটাকে ব্যাহত করতে না পারে। তিনি বলেন, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, তা মূল্যায়ন করে চালুর বিষয়ে একটা সুনির্দিষ্ট সময়রেখা দিতে।
কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেদিন বিকেল পাঁচটায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। ১৭ আগস্ট থেকে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তখন মেট্রোরেল চালু না হওয়ার কারণ ছিল নিম্ন পর্যায়ের কর্মীদের কর্মবিরতি। দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বাসের পর মেট্রোরেলের কর্মচারীরা ২০ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দেন।
সুত্র-দৈনিক ইনকিলাব