অনলাইন ডেস্ক :: ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলো খোলা থাকলেও বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানাচ্ছে দুই দেশ।
বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ফারাক্কার ভারতের অংশে এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি চলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।
বর্ষাকালে ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খোলাই থাকে। এগুলো আটকে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানান তারা।
অন্যদিকে, একই কথা বলছে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প। তারা বলছে, বাঁধ থেকে ভাটির দিকে যে পানি ছাড়া হচ্ছে, তাতে এখনই বন্যার আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে যে আকস্মিক বন্যা হচ্ছে তখনও সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে ভারতের ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে বন্যা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
কিন্তু, সে সময় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছিল এ আকস্মিক বন্যার পূর্ব ধারণা ছিল। তবে এতো ব্যাপক মাত্রায় বন্যা হবে সেটি ধারণা ছিল না সরকারের।
সোমবার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলোই খোলা রয়েছে এমন খবর প্রকাশিত হলে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।
বলা হচ্ছে, ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার ফলে এখন আবার বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে।
কিন্তু, এ ধরনের শঙ্কা একেবারে নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা নিয়ে যে পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের
বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সোমবার যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত রয়েছে।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।
এতে আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এ সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
একইসাথে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও এ সংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সময় কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে।
উন্নতি হতে পারে নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির। একইসাথে ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে পারে।
তবে, কোনো কোনো স্থানে স্থিতিশীল থাকার পূর্বাভাসও দিচ্ছে সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত এ পূর্বাভাসে আরো বলা হচ্ছে, ব্রক্ষপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে।
উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ আছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা নেই’
ভারতের বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যা পরিস্থিতির কারণে ফারাক্কা ব্যারেজের সব গেট খুলে দিয়েছে দেশটি।
তবে বাংলাদেশের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এতে বাংলাদেশের আশঙ্কার কারণ নেই। তেমন কোনো বৃষ্টিপাত নেই। বৃষ্টিপাত হলেও তাতে আমাদের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।
“ফারাক্কার উজানে ভারতীয় অংশে এই মুহূর্তে বন্যা চলছে। কিন্তু আমাদের দেশে বন্যার আশঙ্কা এই মুহূর্তে নেই। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি এখন সমতলে একদম স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য এখন এ মুহূর্তে বন্যার আশঙ্কা করছি না,” বলেন মি. বড়ুয়া।
ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলো খোলা থাকার বিষয়ে মি. বড়ুয়া বলেন, “ফারাক্কা কিন্তু আসলে পানি আটকে রাখে না। পানি ডাইভার্ট করে। আমরা বলি ডাইভারশন স্ট্রাকচার। অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে তারা পানিগুলো ডাইভার্ট করে নিয়ে যায়।”
বর্ষাকালে এ বাঁধের সবগুলো গেট খোলা থাকে বলে জানান মি. বড়ুয়া।
“বর্ষাকালে ফারাক্কা সাধারণত খোলাই থাকে। এ মুহূর্তে উজানের যে অবস্থা অবশ্য আমাদের কাছে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য নেই, তবে আমরা হাইড্রোলজি বা বিজ্ঞান মতে যেটা বুঝে থাকি এ মুহূর্তে ফারাক্কার গেইট সবগুলো খোলা আছে। অর্থাৎ গেইট খুলে দিয়ে বন্যা হয়ে যাওয়ার এমন কোনো সিচুয়েশন ফারাক্কাতে নেই। ফারাক্কার ১০৯টি গেইট খোলা আছে। বর্ষাকালে এগুলো সবসময় খোলাই থাকে। বর্ষাকালে এগুলো আটকে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
ভারতের প্রকল্প কর্মকর্তারা যা বলছেন
ভারতে ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট দু’দিন ধরে খুলে দেয়া হয়েছে বলে বাঁধ কর্তৃপক্ষ বিবিসি বাংলার কাছে সোমবার বিকেলে নিশ্চিত করেছে।
ফারাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার আর ডি দেশপান্ডে জানিয়েছেন, শনিবার থেকে বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “ফারাক্কা বাঁধে ১১ লাখ ৭৭ হাজার কিউসেক মতো জল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার কিউসেক জল ফিডার চ্যানেলের জন্য পাঠানো হয়, বাকি সবটাই বাঁধ থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।”
ভারতের কেন্দ্রীয় জল কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিবারই ফারাক্কা বাঁধের জলস্তর বিপৎসীমা ছুঁয়েছে।
বাঁধের বিপৎসীমা ২২.২৫ মিটার, কিন্তু রোববার দুপুরেই জলস্তর ২২.৭ মিটার ছুঁয়ে ফেলে। সোমবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টাতেও জলস্তর একই রয়েছে বলে জানাচ্ছে জল কমিশন।
একইসাথে কমিশন মঙ্গলবার রাত থেকে জলস্তর কমতে থাকবে বলেও পূর্বাভাস দিচ্ছে।
মি. দেশপান্ডে বলছেন, “ভাটির দিকে যে জল ছাড়া হচ্ছে, তাতে এখনই বন্যার সম্ভাবনা নেই।”
কিন্তু কেন্দ্রীয় জল কমিশন বেশ কদিন ধরেই ফারাক্কা বাঁধের উজানে, গঙ্গা অববাহিকার বেশ কিছু অঞ্চলে বন্যার শঙ্কার কথা জানাচ্ছে। যদিও কোনও সতর্কতা অবশ্য এখনও জারি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফারাক্কার জল থেকে বন্যা হবে কি না, তা বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরের ওপরে নির্ভর করে।
এর একটি হলো হরিদ্বারে গঙ্গার জলস্তর কত। ওই জল ফারাক্কায় আসতে তিন থেকে চার দিন লাগে।
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তথ্য অনুযায়ী হরিদ্বারে জলস্তর এখনও স্বাভাবিক।
দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটি হলো গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের বৃষ্টিপাত।
জল কমিশনের তথ্য এবং পূর্বাভাসে বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু অঞ্চলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকার ইনডিয়া হাইকমিশন। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি একটি স্বাভাবিক মৌসুমী বাস্তবতা। উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানি প্রবাহের বৃদ্ধি ঘটে।