অনলাইন ডেস্ক :: লেবানন এবং ইসরায়েলের মধ্যে শিগগিরই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে জানিয়েছেন লেবাননের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। বৃহস্পতিবার লেবাননভিত্তিক সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম আল জাদিদ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ব সম্প্রচার মাধ্যম কান টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার ভিত্তিতে লেবাননে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার। চুক্তির খসড়া ইতোমধ্যে লেবাননে পাঠানো হয়েছে। খসড়াটি লিখেছে ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার আল জাদিদকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাজিব মিকাতি বলেন, তার ধারণা ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে না, কিন্তু বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত অ্যামোস হচস্টেইনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সেই সেই অনুমান বদলে গেছে।
“টেলিফোনে হচস্টেইন আমাকে জানিয়েছেন যে আগামী ৫ নভেম্বরের আগেই চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তির জন্য যা যা করা দরকার, সব করতে আমরা প্রস্তুত এবং আমরা আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাক্ষর হবে চুক্তি,” আল জাদিদকে বলেন মিকাতি।
কান টেলিভিশন চ্যানেল চুক্তির খসড়া অনুলিপি ইতোমধ্যে প্রকাশও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র সিন স্যাভেটের কাছে রয়টার্স এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান। ইসরায়েলের সরকারি মুখপাত্ররাও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পারে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এই দক্ষিণাঞ্চলেই বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি। গোষ্ঠীটির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার অবস্থান এখানে। ইরানের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও মদতে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ জন্মলগ্ন থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত দশকগুলোতে সীমান্ত অঞ্চলে ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন সংঘাতে জড়িয়েছে হিজবুল্লাহ, তবে উভয়পক্ষের সংঘাত গুরুতর রূপ নিয়েছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও।
প্রায় এক বছর ধরে সীমান্তে সংঘাত চলার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। সেই অভিযান শুরুর ১০ দিনের মধ্যে নিহত হন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এতে গোষ্ঠীটির চেইন অব কমান্ডের সর্বোচ্চ স্তর প্রায় ভেঙে পড়ে।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত লেবাননে মোট নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ।