রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের ‘অবিলম্বে’ ইউক্রেইন ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের জরুরি ঘোষণায় ’অত্যাবশ্যকীয়’ না হলে ইউক্রেইন ভ্রমণ পরিহারের করতেও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা যেটা করি যে, কোনো দেশে বা অঞ্চলে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সে অঞ্চলে থাকা নাগরিকদের সাবধানে রাখার চেষ্টা করি।
“এক্ষেত্রেও সেটা করা হয়েছে।”
পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেইনে মোট কতজন বাংলাদেশি থাকেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এই সংখ্যা চার থেকে পাঁচশ’ হতে পারে বলে ধারণা প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
দূতাবাসের ঘোষণায় বলা হয়, “ইউক্রেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে অবিলম্বে ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। অন্য কোনো দেশে যেতে না পারলে তারা বাংলাদেশে যেতে পারেন।”
একই সঙ্গে সকল বাংলাদেশিদেরকে অত্যাবশ্যকীয় না হলে ইউক্রেনে সকল প্রকার ভ্রমণ পরিহার করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।”
ইউক্রেইনে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। এ কারণে পোল্যান্ডের ওয়ারশ’তে থাকা দূতাবাস একই সঙ্গে ইউক্রেইনের বিষয়গুলো দেখভাল করে।
ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলার মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকেই নাগরিক ও কূটনীতিকদের ইউক্রেইন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
গত কয়েক মাসে ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়া এক লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর আশঙ্কা রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালাবে।
তবে মঙ্গলবার ইউক্রেইন ঘিরে রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে উত্তেজনা এবং আগ্রাসনের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার পর ইউক্রেইন সীমান্ত থেকে কিছু সেনা ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো।
যদিও রাশিয়া ইউক্রেইনে হামলা চালানোর কোনও পরিকল্পনা থাকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
ইউক্রেইনে ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করে হালনাগাদ দেওয়া হবে জানিয়ে ওয়ারশ’তে বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, “সকল বাংলাদেশিকে তাদের অবস্থানের তথ্য দূতাবাসকে অবহিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো, যাতে করে জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাস তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।”
নাগরিকদের ফিরে আসার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, “ব্যক্তি বিশেষ ফেরত আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। সেখান থেকে অনেক দেশের নাগরিক চলে গেছেন বা যাচ্ছেন।
“আমাদের কেউ আসার জন্য সহায়তা চাইলে আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে কাছাকাছি দেশ থেকে তাদের ফেরত আনব।”
এর আগে রোববার পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের আরেক ঘোষণায় বাংলাদেশিদের ‘অপেক্ষাকৃত নিরাপদ’ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
সেখানে বলা হয়, “এই নিরাপদ স্থান হতে পারে ইউক্রেনের বাইরে কোন নিরপেক্ষে দেশ অথবা ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে পোল্যান্ড সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা। স্থিতাবস্থা প্রত্যাবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত এই পরামর্শ বহাল থাকবে।”
এদিকে, সংঘাত এড়িয়ে কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে ইউক্রেইনে সমস্যার সমাধান করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
১ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, ওই অঞ্চল ও অঞ্চলের বাইরের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর নির্ভর করছে। এমন সমাধান কেবল জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব।
”এ কারণে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে সংলাপ ও সহযোগিতার মানসিকতা প্রতিফলিত হবে।”